খুব কাছে তবু কেন দূর ছিল চট্টগ্রাম টেস্ট জয়!
সৈয়দ রশিদ আলম
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ পরাজিত দল। ভালো খেলেও দল হেরেছে। কিন্তু ইংল্যন্ডের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের টাগাররা। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে আমরা হেরেছি, যদিও অর্জনও কম হয়নি এই টেস্টে। ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে যে ক্রিকেট আমরা খেলেছি তা সত্যিই আমাদের ক্রিকেট উন্নতির লক্ষণ। ইতোমধ্যেই ওয়ানডে ও টি-২০তে আমাদের সামর্থ্যরে প্রমাণ রাখতে সক্ষম হচ্ছি। বিশেষ করে ওয়ানডেতে আমরা এখন বিশ্বসেরা দলের মর্যাদার আসনে। টি-২০তেও ভালো করছি। যদিও তা প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। তবে টেস্টে সেই অর্থে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি কী? পারব কি করে, যদি বছরে এক-দুইটি টেস্ট খেলি? তারপরও যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে করে তোলে হেরেছি তা নিয়ে আমরা গর্ব করি।
সব ক্রিকেটারদের নিয়েই আমরা অহংকার করি, তারা অহংকারের মানুষ। তাদের সাফল্যে আমরা আনন্দিত হই, বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে বসে। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে খেলোয়াড়েরা কি যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন? সবাই না হলেও দুই-একজন ক্রিকেটারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ ক্রিকেট ভক্তরা হতাশ, কেন এমনটি হলো? কেন আমরা এত কাছেও গিয়েও পরাজিত দলে? খুব কাছে তবু কেন দূর ছিল চট্টগ্রাম টেস্ট জয়! হায়, এমন পরাজয় কেন আমাদের কপালে জুটে বারবার? মুলতান টেস্টের স্মৃতি আবারও সামনে। সেবারও জয় কাছে ছিল, তবু অনেক দূর হয়ে গিয়েছিল। সে পরাজয়ের অনেক কারণ ছিল। পাকিস্তান দলের উইকেট রক্ষক রশিদ লতিফের অনৈতিকতা, মোহাম্মদ রফিকের অনুকরণীয় উদাহরণ, ইনজামামুল হকের অনবদ্য ইনিংস ও ভাগ্যের চরম নিষ্ঠুরতায় সেদিন আমরা পরাজিত দলে ছিলাম। চট্টগ্রাম টেস্টেও জয়ের কাছাকাছি ছিলাম, কিন্তু ভাগ্য বদলাল না! এ কি করে সম্ভব! এ কেমন ভাগ্য লিখন? কেন এমনটি হয় শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই?
ড্যাশিং ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানের সুযোগ ছিল ইনজামাম হওয়ার। কিন্তু তিনি পারেননি। বলছি না, তার আন্তরিকতার অভাব ছিল, বলছি না আমরা খারাপ খেলেছি, কিন্তু পরাজয়টি তো সত্য। আমরা হেরেছি খুব কাছে গিয়েও। তাইজুল ইসলামের আউটের পর সাব্বির রহমান যখন মনোকষ্টে মাথানত করে অশ্রু বর্ষণ করলেন, তখনই তার আন্তরিকতার প্রমাণ মেলে। কতটা দরদ আর দেশপ্রেম ছিল তার তা আর প্রমাণ করার কিছু থাকে না। দেশপ্রেম নিয়েই জীবনের প্রথম টেস্টটি তিনি খেলতে নেমেছিলেন।
একসময় বিশ্বনন্দিত ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার যখন নিজের জন্য খেলতেন, তখন একের পর এক বিশ্বরেকর্ড তার নামের সঙ্গে যোগ হতো। কিন্তু ভারত অনেকসময়ই পরাজিত দলে থাকত। ভারতের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কঠোর সমালোচনা হওয়ার পর শচীন টেন্ডুলকার অনেকটাই সতর্কতা অবলম্বন করতেন, একই সঙ্গে একজন মনোবিজ্ঞানী ভারতীয় ক্রিকেটারদের করণীয় শিখিয়ে দিতেন।
আমাদের ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তারা দেশকে ভালোবেসেই খেলেন। সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা তো মানুষ। ভুল তাদের হতেই পারে। ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। ক্রিকেটাররা কখন কি করবেন, কি করবেন না, এটা দলের কোচ যেমন জানিয়ে দেবেন, তেমনি একজন মনোবিজ্ঞানী খেলোয়াড়ের মধ্যে স্থিরতা এনে দিতে সক্ষম হন। ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে গিয়ে যেন টেস্ট ক্রিকেটের মতো না খেলেন, তেমনি টেস্ট ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ওয়ানডে ম্যাচকে মাথা থেকে বের করে দেওয়া দিতে হবে। যেদিন এটা আমাদের ক্রিকেটাররা অনুসরণ করতে পারবেন, সেদিন আর তীরে এসে তরী ডুববে না। জয় তখন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে। তবে হতাশ নই আমরা, বিশ্বাস আছে ক্রিকেটারদের প্রতি। টেস্ট ম্যাচেও নিয়মিত সাফল্য পাব, জয় আমাদের হবেই।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান