এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
এক হাজার ছাত্রের জন্য বড় আবাসিক হল ক্যাম্পাসের আশেপাশে নির্মাণের জন্য জায়গা এবং পরিবেশ নেই। সেজন্য আমরা কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত জেলখানার বিপরীত দিকে ঢাকা মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২৩ বিঘা জমি আমরা ইতোমধ্যে ক্রয় করেছি। আশেপাশের আরও কিছু সরকারি জায়গা মিলে এখন আমরা প্রায় ২৫ বিঘা জমির মালিক। এই জায়গায় ছাত্রদের হল নির্মাণ করা হবে। নতুন আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পে এই দুইটি কাজ করা হবে। এর বাইরেও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে লাইব্রেরিতে বইয়ের সুবিধাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এতে করে অবকাঠামোগত সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটবে।
৭. আরও একটি কাজ আমরা করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। যদিও আমাদের পরিসর এবং জায়গার সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য এইসব নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা- যেমন সঙ্গীত, চারুকলা, নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন এগুলো সুকুমার কলার সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরান ঢাকায় এইসব সাংস্কৃতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা আমার লক্ষ্য ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার চিন্তা অনেক আগে থেকেই ছিল। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন বিভাগ চারুকলা, নাট্যকলা, সঙ্গীত, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এসব কোর্স না থাকার কারণে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছিল। কেবল তাই নয়, এইসব বিভাগ খোলার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন সাধন হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এখন এমন কোনোদিন নেই যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অনুষ্ঠান হয় না। এইসব বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অপর একটি চাওয়ার বিষয় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট’ (আইইআর) খোলা। আমাদের এই চাওয়াও পূর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আইইআর চালু করেছি। এর জন্য একটি ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং পোগোজ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পোগোজ স্কুল এখন পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ একীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে আইইআর- এর পরিচালক দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি আইইআর-এ নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পড়াশোনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে ওই স্কুলে শিক্ষার মানোন্নয়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
৮. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক হওয়ায় যাতায়াতের জন্য বাসনির্ভর। বাসের তীব্র সংকট একং স্বল্পতা ছিল। আমরা ইতোমধ্যে অনেক রুটে বাস চালু করেছি। শিক্ষকদের বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমি যখন যোগদান করি তখন শিক্ষকদের বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হতো। এখন কোনো শিক্ষক বলতে পারবেন না তাকে সেইভাবে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। শিক্ষকরা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং অনেকে দূরবর্তী স্থানে বাসে বসে যেতে পারছেন। আমাদের বাস এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মাওয়াঘাট, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী পর্যন্ত যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায় সংকট এখনও রয়েছে এবং তা উন্নত হওয়া দরকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো কয়েকবার আসা-যাওয়া করে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে গাড়িগুলো একবার বের হলে যানজটের কারণে দ্বিতীয়বার আর যেতে পারে না। এর একটি সমস্যা হচ্ছে, গাড়ি রাখার জায়গা সংকট। গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অন্তরায়। তারপরও পরিবহনে আরও গাড়ি আমরা যুক্ত করব। অবাসিক সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের পরিবহনকে আরও জোরালো করতে হবে এবং সেই চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।
আমরা নতুন বাস কেনার ব্যবস্থা করেছি। ক্রয়কৃত এবং ভাড়ায় নেওয়া নতুন কয়েকটি বাস যুক্ত হচ্ছে পরিবহনে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে ২০টিরও বেশি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আবাসিক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করা একটি বড় কাজ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এতবছর বয়সেও কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। আমরা ইতোমধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করেছি। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি প্রয়োজনে এটি কাজে লাগবে।
আমাদের ক্যাম্পাসে নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। যেমনÑ ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, বাঁধন, উদীচী, সাংবাদিক সমিতি, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, রোভার, বিএনসিসিসহ অন্যান্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের কার্যক্রমে আমরা সর্বাত্মকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকি। প্রায়ই তাদের প্রোগ্রাম থাকে এবং তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত গতিশীল। এদের কার্যক্রমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করছে।
লেখক: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান