আবিদা সুলতানা
মাতৃত্ব অর্জন যেকোনো নারীকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছে দেয়। একজন সুস্থ মা-ই একজন সুস্থ শিশু জন্ম দিতে পারেন। সুস্থ নবজাতকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব। এ জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, যতœ ও সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব হলো মাতার খাওয়া-পরার উত্তম ব্যবস্থা করা। (সূরা আল-বাকারা : ২৩৩)
সাধারণত সমাজ-জীবনে স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের খাদ্য পরিবেশনের পর স্ত্রী নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সুষম খাবার রাখে না। স্ত্রী বা সন্তানের মা যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণে যতœবান হন, এদিকে পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টি রাখা অবশ্যকর্তব্য। বিশেষ করে গর্ভকালীন এবং নবজাত শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দানকালে এ ব্যাপারে বেশি নজর রাখা দরকার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা (স্বামীরা) যা খাবে তাদের (নারীদের) তা-ই খেতে দেবে।’
সন্তান যে মুহূর্তে মাতৃগর্ভে আসে ঠিক তখন থেকেই মায়ের যতœ নিতে হয়। সন্তান গর্ভে এলে মা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জীবন যাপন করবেন। তা না হলে মা ও শিশু উভয়েরই সমূহ বিপদ হতে পারে। গর্ভবতী মাকে অবশ্যই তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করতে হবে। তাকে খারাপ কাজ, অসদাচরণ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। এ সময় মায়ের ও গর্ভেও শিশুর দুজনের খাদ্য প্রয়োজন। তাই গর্ভবতী মাকে বেশি করে পুষ্টিকর ও পরিমিত সুষম খাবার খেতে হবে। এই মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে তোমরা উত্তম খাবার খাও।’ (সূরা বাকারা : ১৭২)
নবজাত শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য মায়ের দুধই সেরা। মায়ের দুধ শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করে। যেসব নবজাতক শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ পান করে, তারা বড় হওয়ার পর স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয় কম। মায়ের বুকের দুধ শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সেরা খাবারই শুধু নয়, বরং তা নবজাতকের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি হক বা জন্মগত অধিকার। এ বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।’ (সূরা বাকারা : ২৩৩)
নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। যদি কোনো মা তাঁর নবজাত শিশুকে দুই বা আড়াই বছর দুধ পান করাতে চান, তাহলে এ সময় মায়ের নতুন করে গর্ভধারণ না করাই বাঞ্ছনীয়। নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। এ জন্য জন্মের পরপরই শিশুকে মায়ের শালদুধ দিতে হয়। অনেক সময় মায়ের বুকের হলুদ রঙের শালদুধ অজ্ঞতাবশত ফেলে দেওয়া হয়। শালদুধ গাঢ় এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এমন ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেক সময় নবজাতককে মায়ের দুধ পান কে বঞ্চিত করা হয়। অথচ জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করলে বিপুলসংখ্যক নবজাতকের জীবন রক্ষা পায়। আল্লাহ পাক আমাদের কে শিশুর আদও যতœ নেওয়ার তাওফিক দান করুন। লেখক: আলেমা