তাশফিক মুহাম্মদ
ইসলাম বিক্রয়যোগ্য পণ্যের ত্রুটি গোপন করাকে সমর্থন করে না। এটি ধোকার শামিল। আর ধোকা দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। বর্ণিত আছেÑ একবার রাসুল সা. খাদ্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন খাদ্যস্তুপের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন এবং তাতে আর্দ্রতা অনুভব করলেন। বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? বিক্রেতা বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তাহলে ভেজা শস্যগুলো উপরে রাখতে, যেন সকলে দেখতে পায়। অতঃপর নবীজি সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে সে আমাদের দলভূক্ত নয়।’ [তিরমিজি]। বর্ণিত আছেÑ সাহাবি হজরত জারির রা. যখন মুসলমান হন এবং বিদায় নিতে উদ্যত হন তখন হজরত রাসুলুল্লাহ সা. তার কাপড় টেনে ধরেন এবং বলেন, ‘প্রতিটি মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবে।’ তারপর থেকে হজরত জারির রা. এর নিয়ম ছিলÑ তিনি কখনও কোনো কিছু বিক্রি করলে তার ত্রুটিপূর্ণ অংশটি একেবারে সামনে রাখতেন। আর ক্রেতাকে বলে দিতেন, ‘এর মধ্যে এই ত্রুটি আছে। ইচ্ছা করলে নিতে পারেন, আবার নাও নিতে পারেন।’
হজরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, একবার এক ব্যক্তি তিনশ’ দিনার (আরব্য মুদ্রা) দিয়ে একটি উষ্ট্রী ক্রয় করলো। সে সবেমাত্র উষ্ট্রীটি নিয়ে রওনা দিয়েছে, আর তিনি চিৎকার করে ডেকে বললেন, এই উষ্ট্রী তুমি কী জন্যে কিনেছ? লোকটি বলল, সওয়ার হওয়ার জন্য। হজরত ওয়াসিলা রা. বললেন, এর ক্ষুরে ছিদ্র আছে এবং সে দ্রুত চলতে পারে না। লোকটি উষ্ট্রীটি তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিল। অবশেষে উষ্ট্রীর মালিক বাধ্য হয়ে একশ’ দিরহাম কমিয়ে দিল। লোকটি চলে যাবার পর ব্যবসায়ি হজরত ওয়াসিলা রা. কে বলল, আপনি তো আমার ক্ষতি করলেন। হজরত ওয়াসিলা রা. বললেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, পণ্যের ত্রুটি গোপন করে তা বিক্রি করা নাজায়েজ। আর কেউ যদি এই ত্রুটি সম্পর্কে অবগত থাকে তাহলে তার কর্তব্য হলো তা প্রকাশ করে দেয়া। এমনকি কেউ যদি ত্রুটি গোপন করে ক্রেতাকে অন্ধকারে রেখে লেনদেন সমাপ্ত করে ফেলে আর পরে গিয়ে ক্রেতা ত্রুটি সম্পর্কে অবগত হয়, তাহলে সে চাইলে এই লেনদেনকে বহাল রাখতে পারে, আবার বাতিলও করে দিতে পারে। ফিকহের পরিভাষায় এই অধীকারকে বলা হয় ‘খিয়ারে আইব’।
লেখক: গদ্যশিল্পী