ইসলামে সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ
মাওলানা সাইফুল ইসলাম রিয়াদ
ইসলাম একটি সাবর্জনীন জীবনাদর্শ। যা মানুষকে নীতি-নৈতিকতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, ধন-সম্পদ ও মান-মযার্দা সংরক্ষিত হয়। আসলে অন্যকে সম্মান করার মধ্য দিয়েই অজির্ত হয় মহৎ গুণ। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আদর্শ সমাজ। এর বিপরীত চর্চা শুরু হলে বিপন্ন হয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। পারস্পরিক অশ্রদ্ধার কোনো সুফল নেই। কেননা অশ্রদ্ধা ক্রমশঃ মানুষকে সহিংসতা আর পাশবিকতার দিকে ঠেলে দেয়। কাজেই এই অশ্রদ্ধা চর্চার সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে বজর্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ ও শিক্ষিত বিবেকবানগণ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক উন্নয়নকে দীঘর্মেয়াদী ও টেকসই করার জন্য রাজনীতি, সমাজ, পরিবার, অফিস-আদালতসহ সবখানে পুনরায় সহিষ্ণু, উদার ও শ্রদ্ধার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ইসলাম এ বিষয়ে বেশ কার্যকর রাস্তা প্রদর্শন করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের সূরা হুজরাতে মুসলমানদের করণীয় বিভিন্ন সদাচরণের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। সেখানে সামাজিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত, সুসংহত এবং সুরক্ষিত করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এই সূরা হতে পারে মুসলমানদের জন্য পরম পাথেয়, পথ নির্দেশক।
আসলে ইসলামি মূল্যবোধের সৌন্দর্য হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস প্রদর্শন- যা প্রত্যেকের কর্তব্য বলে মনে করা হয়। একজন মুসলিম তার প্রতিপালকের প্রতি কেমন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি রাখবে। তার আচরণ কিভাবে নির্ধারণ হবে এবং কিভাবে প্রভাবিত করবে তার এবং হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) সম্পর্ককে। তার এবং সমাজে বসবাসকারী অন্যান্যদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং আচরণ কেমন হওয়া উচিত- এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই সূরায়।
এ সূরার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে মুসলমানদের এমন আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরণ শিক্ষা দেওয়া যা তাদের ইমানদারসূলভ স্বভাব চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই হয়। আল্লাহ ও তার রাসূলের ব্যাপারে যেসব আদব-কায়দা ও শিষ্টাচারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এই সূরার প্রথম পাঁচ আয়াতে তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি খবর বিশ্বাস করা এবং সে অনুসারে কোনো কর্মকা- করে বসা ঠিক নয়, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো খবর পাওয়া যায়- তাহলে প্রথমে ভেবে দেখতে হবে খবর পাওয়ার মাধ্যম নির্ভরযোগ্য কি না। নির্ভরযোগ্য না হলে তার ভিত্তিতে কোনো তৎপরতা চালানোর পূর্বে খবরটি সঠিক কি না তা যাঁচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা মন্দ কাজগুলোকে নাম ধরে ধরে নিষেধ করেছেন। অতঃপর বংশগত বৈষম্যের ওপর আঘাত হানা হয়েছেÑ যা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও বংশের নিজ নিজ মর্যাদা নিয়ে গর্ব ও অহঙ্কার করা, অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে নিচু মনে করা এবং নিজেদের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যদের হেয় করা, এসব এমন জঘন্য অভ্যাস- যার কারণে পৃথিবীতে অশান্তি বিরাজমান। সূরা হুজরাতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষের আচরণ-আচরণ কেমন হবে- তা শিক্ষা দিয়েছেন। যে শিক্ষা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। লেখক: আলেম ও সাংবাদিক