কর্মফল
বিপ্লব হালদার
দোষ-গুণ সকলেরই আছে। তা না হলে জন্ম হবে কেন? সৎ কি অসৎ কর্ম যাই কর, তার ফলভোগ করতে হবে। তবে অসৎকর্মের চেয়ে সৎকর্ম করাই ভালো; সৎকর্ম ভগবানের দিকে নিয়ে যায়। কর্ম না করলে কি চলে? ভগবানই আমাদের কাজের মধ্যে রেখেছেনÑ তিনিই ইচ্ছা করলে কর্মের পাশ কেটে দিতে পারেন। নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলেই কি কর্মপাশ কাটে? আর নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবার জো কি? সেইজন্য আমাদের তারই কর্ম জেনে কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ করে কাজ করতে হবে।
গুণ গ্রহণ করবার ক্ষমতার নাম পা-িত্য। ভগবান সকলের গুণ গ্রহণ করেন। আর যিনি ওইরূপ করেন, তিনিও তার দাস, প-িত। ভগবানের দয়া না হলে ঠিক ঠিক কর্ম হয় না; তিনি যার প্রতি কৃপা করেন, তাকে দিয়ে কর্ম করিয়ে নেন। হিংসা করলে কি হবেÑ যিনি কর্মী, তিনিই বড় হন। ‘অমুকের মত বড় হব’ মনে করলেই কি বড় হয়? তারা কত দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করেছেন, তবে না বড় হয়েছেন। কর্মহীন ব্যক্তিকে ভগবান ঘৃণা করেন। পৃথিবী কর্মক্ষেত্র। যে বেশি কর্মী, তাকেই বেশি করে খেতে-পরতে দেন। কর্মতেই বড় করে, আবার কর্মতেই ছোট করে। মানুষ কি আর ভালো-মন্দ আছে? কর্মই হলো প্রধান। কর্মের জন্য কেউ বা পূজা পাচ্ছে, কেউ বা গাল খাচ্ছে। যারা কর্ম করে পূজা পান, তারাই ধন্য। যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন, তারা বলেন কর্ম না করলে কি চলে? ভগবানই কর্ম লিখেছেন, তিনিই আবার কর্ম কাটেন। কর্মের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি হয়। কর্মের দ্বারাও ভগবানকে বোঝা যায়।
যার ভোগ আছে সে ভুগবেই। বাধা দিলে কি হবে? মাঝে থেকে অপরের বিষ নজরে পড়া। ভগবানকে নিয়ে পড়ে থাক, তা হলেই কল্যাণ হবে। ভগবান জীবের কর্ম দেখেন, জন্ম দেখেন না। বামুনের ঘরে জন্মে যে সৎকর্ম না করে, তাতে কি হবে? নিচ ঘরে জন্মে যে সৎ কর্ম করে, ভগবানকে ভক্তি-বিশ্বাস করে, তার জন্ম স্বার্থক। জীব কর্ম করতে বাধ্য। সৎ কাজ করলে নিজেরও কল্যাণ, পরেরও কল্যাণ। আর অসৎ কাজ করলে নিজের এবং অপরের সকলেরই অকল্যাণ। কর্মের দ্বারা জীব হয়, কর্মের দ্বারাই দেবতা হয়। কার দ্বারা ভগবান কি কর্ম করান তার কি কিছু ঠিক আছে? পঙ্কে বদ্ধ করকরি, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি, কারে দাও মা ব্রহ্মপদ, কারে কর অধোগামী। (সকলি তোমার ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি)
ভগবানকে প্রাণভরে ডাকলে তিনি সব বুঝিয়ে দেন। বাজে গল্প না করে ভগবৎ-চর্চা ও শাস্ত্রালোচনা কর, নিজেরই কল্যাণ হবে। এমন কর্ম করতে হয়, যাতে ভগবান খুশি। যতদিন বাঁচতে হবে, ততদিন কর্ম করতেই হবে। কর্ম না করে উপায় নেই। সাধুরা ভগবানের কর্ম করেন, গৃহস্থেরা সংসারের কর্ম করেন; তবে যদি ভগবানে মন থাকে, তা হলেই বাঁচোয়া। মানুষ সবই এক, কেবল কর্মেই পৃথক করেছে। ভগবানকে যতটুকু দেবে, ততটুকু পাবে। চার আনা দাও, চার আনা পাবে; ষোল আনা দাও, ষোল আনাই পাবে।
অসৎ কাজ করলে ভয় আসবে, দুঃখ পাবে। সৎ কাজ করলে ভগবানের দিকে মন যায়, শান্তি পায়। সৎকর্মী নির্ভীক হয়। কর্মের পথ ও মত কারোর মিল হয় না। তবে উদ্দেশ্য সকলেরই এক হতে পারে। যে কর্মের পথ ও মত মিল করতে চায়, সে নির্বোধ। সৎকাজ যত হয়, ততই সুখের বিষয়। সৎ কাজ করতে প্রথমে কষ্ট হয়, ভবিষ্যতে আরাম হয়। আর অসৎ কাজ করতে প্রথমে আনন্দ হয়, ভবিষ্যতে দুঃখ হয়।