ঈশ্বরের স্বরূপ
ডেস্ক রিপোর্ট: বেদ এবং সাধারণ বুদ্ধি অনুসারে ঈশ্বর অবশ্যই নিরাকার।
১. তার যদি কোনো আকার থাকত তাহলে সর্বব্যাপী হতে পারতেন না। কারণ আকার বলতে আমরা বুঝি, একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ অবয়ব এবং সেই জন্য তার যদি কোনো আকার থাকে তাহলে সে তার সীমার বাইরে যেতে পারবেন না।
২. যদি ঈশ্বর অশিষ্ট সাধারণ নগণ্য হতেন তাহলে তার আকার দেখা যেত। কারণ কোনো বস্তু যা অন্য আরেকটি বস্তু যার আলোক তরঙ্গ প্রতিফলিত হতে পারে, তার চেয়ে সুক্ষ্মতর তাহলে আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই না। ঈশ্বর হচ্ছেন সবচেয়ে সুক্ষ্মতম, ফাঁকহীন এবং সর্বত্র একরূপ (সূত্র: যজুর্বেদ ৪০.৮) সেজন্য তার কোনো আকার হতে পারে না।
৩. যদি ঈশ্বরের আকার থাকে তাহলে কেউ তার আকার সৃষ্টি করেছে। এটা একেবারেই অসম্ভব। যদি আপনি বলেন তিনি নিজেই নিজের আকার তৈরি করেছেন, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে তিনি আগে নিরাকার ছিলেন।
৪. যদি আপনি বলেন ঈশ্বর আকার ও নিরাকার উভয়ই তাহলে এটা পরস্পর বিরোধী হয়ে যাবে।
৫. যদি বলেন তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন ঐশ্বরিক আকার ধারণ করেছেন, তাহলে দয়া করে বলবেন কি ঐশ্বরিক বলতে আপনি কী বোঝেন? ধরুন ঈশ্বর কোন একটি মানুষের ঐশ্বরিক আকার ধারণ করলেন। তাহলে এখন আপনি কীভাবে ঈশ্বরের সীমাবদ্ধ দেহের অণুগুলো ও অঈশ্বরের অণুগুলো নির্ধারণ করবেন। অধিকন্তু তিনি সর্বত্র একরূপে বিরাজ করেন তাহলে তিনি কীভাবে মানব দেহধারী ঈশ্বর ও পৃথিবীর বাকি অংশের মাঝে আলাদা করবেন? যদি তিনি সবর্ত্র একরূপে বিরাজ করেন থাকেন তাহলে তিনি আমরা কীভাবে তার নির্দিষ্ট অবয়বকে সর্বত্র দেখতে পাব?
৬. আমরা কি দেখি যে প্রকৃতপক্ষে মানবদেহ হচ্ছে সদা পরিবর্তনশীল। এটা এক্কেবারে অসম্ভব মানবদেহ অথবা পৃথিবীর বাকি অংশের অণুগুলোকে স্বতন্ত্র করা। ঠিক তেমনি মানব ঈশ্বরের দেহকে পৃথক করাও অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি তাহলে মানব ঈশ্বর দেহ থেকে যে থু থু, মূত্র, ঘাম, মল বা অন্যন্যা যা নির্গত হবে তাও কি ঐশ্বরিক?
৭. বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপ ধারণ করার কোনো ধারণা নেই। অধিকন্তু সেখানে এমন কিছুর উল্লেখ নেই যে ঈশ্বর আকারহীন হয়ে কিছু করতে পারবে না তাই তাকে অবশ্যই আকার ধারণ করতে হবে।
৮. আমরা সাধারণত শ্রী রামচন্দ্র এবং শ্রী কৃষ্ণ এর মতো কাউকে ঐশ্বরিক মানবরূপ বলে গণ্য করি তারা আসলে ঐশ্বরিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মনে আছে আমি আমরা এখানে ঈশ্বরের ভিতরের কণ্ঠস্বরের কথা বলেছিলাম? এই সকল কালজয়ী চরিত্রগুলো ছিলেন মনের বিশুদ্ধতা ও উপাস্য ঈশ্বরের সংক্ষিপ্তসার মাত্র এবং সেজন্য সাধারণ মানুষ তাদেরকে ঈশ্বর জ্ঞান করে। কিন্তু বেদ ঈশ্বর ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনাকে নিষিদ্ধ করেছে। এইরূপে এই সকল চরিত্রগুলোকে যা সাধারণ মানুষ ঈশ্বর মনে করে তাদের পূজা করার বদলে তাদের অনুকরণ করে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। এই সকল বীরদের ভক্তদের বেদ অনুযায়ী বলা হয়েছে এখনই সময়! বেদকে জান।
৯. যদি ঈশ্বর আকার ধারণ করবে এবং সেই সকলই আকারের পূজার মাধ্যমে মুক্তিলাভ হবে তাহলে অবশ্যই বেদে এই বিষয়ে বর্ণনা থাকত। কিন্তু বেদে এই রকম কোনো ইঙ্গিতই দেওয়া নেই।