ডব্লিউএফপির প্রতিবেদন : ৪ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন অজানা কারণে প্রতিবেদনটি আর নেই তাদের ওয়েবসাইটে!
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
গত বুধবার ঢাকায় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) বা বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি ‘ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রেশন ইন বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি’বিষয়ক এক কৌশলগত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে প্রদর্শিত হয়েছে দেশের ৪ কোটি মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন। সেটি প্রণয়নে ছয় সদস্যের একটি স্বতন্ত্র দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান।
এ সম্পর্কে ডব্লিউএফপির ওয়েবসাইটে ‘প্রচ্ছদ’টি বিদ্যমান থাকলেও অজানা কারণে তার ‘পূর্ণাঙ্গ’ ও ‘সারসংক্ষেপ’ কোনো প্রতিবেদনই আর নেই। ক্লিক করলে বলে ‘দিস সাইট ক্যান নট্ বি রিচড্’; অর্থাৎ সেটি পাওয়া যাবে না। কিন্তু কেন? তবে কী কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে? অথচ ওই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের অন্তত তিনটি জাতীয় দৈনিক সম্পাদকীয়সহ নিজস্ব প্রতিবেদন ছেপেছে। না ছাপারও কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কেননা তা খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির পরিস্থিতিকে সরকারের নজরে এনেছে, যাতে সরকার সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের নিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণে সক্ষম হয়। সে জন্য স্বয়ং অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিতের উপস্থিতিতে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামালের সভাপতিত্বে তা প্রকাশ করা হয়। অন্যদের মাঝে তাতে অংশ নেন- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম, ডব্লিউএফপির প্রধান কর্মকর্তা জেমস হার্ভে, ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি ক্রিস্টা রাদের ও প্রতিবেদন দলনেতা অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান।
এতে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত তার বক্তব্যে বলেছেন, এ গবেষণা প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সরকারকে ২০২৪ সালের মধ্যে জাতিসংঘ প্রণীত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২’, সংক্ষেপে ‘এসডিজি-২’ পরিপূরণে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে ফলপ্রসূ সহায়তা করবে।
তবে লক্ষ্যণীয়ভাবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে- আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সঠিক পুষ্টির কারণে স্থ’ূলতা এবং শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব পরিলক্ষিত। সে জন্য দেশের ৪ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে- স্বাধীনতার পর পরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া এ দেশটি বিপুল দারিদ্র্য ও ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা করে গত সাড়ে চার দশকে অনেক উত্তরণ ঘটিয়েছে, যা অস্বীকারের উপায় নেই। তবুও সরকার ও জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির যৌথ গবেষণায় দেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের খাদ্য নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত নয়। বলা হচ্ছে- প্রতি বছর পুষ্টিহীনতার কারণে বাংলাদেশের উৎপাদন ১০০ কোটি ডলার যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য খাতেও তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে।
বাস্তবিকই দেশের ৪ কোটি মানুষের ক্ষুধা নিবারণ ও পুষ্টি পরিপূরণ একটি মস্ত চ্যালেঞ্জই বটে। সেটা মধ্যম সারির দেশে উন্নীত করার আগে পরিপূরণ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। দেশের আপামর মানুষ সেটা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করে।