উপকূলীয় মানুষের জন্য ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ দাবি
দেলওয়ার হোসাইন: জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার উপকূলীয় মানুষের জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ঋণের বদলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমানোর জন্য উন্নত বিশ্বের বর্তমান কার্বন নির্গমন ব্যাপক মাত্রায় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করারও দাবি উঠেছে।
আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২২) উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ ২০১৬’ শীর্ষক সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনা যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুসারে শিল্পোন্নত দেশগুলো কার্বন নির্গমন কমানো এবং জলবায়ু অর্থায়নের যে ঐচ্ছিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। অপরদিকে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা থাকলেও সবুজ জলবায়ু তহবিলের (জিসিএফ) আর্থিক, পরিবেশগত এবং অন্যায্য মানদ- নিশ্চিত করতে সক্ষম না হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলো সরাসরি তা সংগ্রহ করতে পারছে না। আর অন্যদিকে এ সুযোগে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান ঋণ বাণিজ্যের সুযোগ নিচ্ছে, যা কাম্য নয়।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশগুলো প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয় বছরে মাত্র ৩৬ হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও দেশগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। আসন্ন কপ-২২ সম্মেলনে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় অনুদান প্রদান এবং একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঋণবাণিজ্য বন্ধ করার পাশাপাশি এ ধরনের ঋণ গ্রহণ না করার জন্যও সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ক্লিন-টিআইবি-সনাক খুলনা ওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদার সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায্যতা ঘোষণা’ পাঠ করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।
ঘোষণায় মরক্কোর মারাকেশ শহরে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২২) শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোর নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি করা, নির্গমন কমানোর পরিমাণ যাচাই করার জন্য পরিবীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ঋণদান বন্ধ করা, সবুজ জলবায়ু তহবিলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সরাসরি অভিগম্যতা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনা, বরাদ্দ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদান করা, জলবায়ু-বাস্তুচ্যুতদের উন্নত দেশে স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের অধিকার দেওয়া, জলবায়ু-দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা, জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য জাতিসংঘের অধীনে বিশেষ সংস্থা গড়ে তোলা এবং জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলাসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টি জেলাসহ বাংলাদেশের ১৫টি জেলার শতাধিক বেসরকারি সংগঠন এবং দশ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ, ক্লিন, টিআইবি ও সনাক খুলনার উদ্যোগে ২২ থেকে ২৮ অক্টোবর সাত দিনব্যাপী ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ’ এর বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে এবং তারই অংশ হিসেবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম