হঠাৎ পাওয়া বাক্য বদলে দিলো জীবন
মিমোষা লিমু হাওলাদার
রাত ১১টা বেজে ১৩ মিনিট। পড়ার টেবিলে বসে অনামিকা ভাবছে, কি থেকে কি হলো তার জীবনে ! ভাবছে তার বেড়ে ওঠার কথা। অনামিকার শৈশব কেটেছে মামার বাড়িতে। সবকিছু পাওয়ার পরও কি যেন
এক অপূর্ণতা ছিল অনার জীবনে। সবসময় সে বাবা মাকে বলতো, তোমরা আমাকে ভালবাসোনা, আমি কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। অনা ভাবতো, মায়ের সব ভালবাসাই যেন শুধু ওর ছোট বোনটার জন্য, একটা হিংসা কাজ করতো ছোট বোনের উপর। অনেক বেশি অভিমান জমে ছিল বাবা মায়ের উপর, কেন তাকে মামা বাড়িতে রাখা হলো পাঁচ পাঁচটা বছর! অনা ভাবতো চলে যাবো অনেক দূরে, যদি কখনও সুযোগ হয়। আস্তে আস্তে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুলো অনা, ইচ্ছা ছিল হলিক্রস কলেজে পড়ার, কিন্তু বাবার আর্থিক অবস্থার কারনে ভর্তি হতে হলো বাড়ির কাছেই একটা কলেজে। আরও একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হলো বাবা মায়ের উপর, ভাবতো ইচ্ছা করে তাকে ভাল কলেজে ভর্তি করলো না, ছোট বোনের হলে ঠিকই করতো। কলেজে গিয়ে অনা কোন ভাল বন্ধু পেলোনা, পুরো কলেজে সে একা একটা খ্রিস্টান মেয়ে। অনার জীবনযাত্রা কেমন যেন হয়ে গেল, মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেল। একদিন অনার এক বন্ধু এসে অনাকে বললো, তোকে তো একজন খুব ভালোবাসে। অনা বললো, ভালোবাসে তো কি ! এ নিয়ে এখন ভাবতে চাই না আমি, এখন শুধু পড়াশুনা। অনার বন্ধু বললো তবুও ভেবে দেখিস। এরপর শুরু হয়ে গেল বন্ধুদের দুষ্টামি আর মুখ টিপে হাসাহাসি। বাবা মায়ের উপর অভিমান আর ছেলেটার পাগলামি দেখে অনা দূর্বল হয়ে পড়লো ছেলেটার প্রতি। একটুও ভাবলোনা ব্যাপারটা, কেউ ভালোভাবে নিবে কি না ! অনা শুধু এটাই ভাবলো জীবনটা আমার তাই আমার ইচ্ছাই সব। পড়াশুনায় অমনোযোগী হলো অনা, ঠিকমত ক্লাসও করতো না কলেজে। নিজের যখন যা ইচ্ছা তাই করতো, কেউ শাসন করলে মুখে মুখে তর্ক করতো। তার জীবনে যেন ওই ছেলেটা ছাড়া আর কেউ ভাল চায় না। একদিন অনা জানতে পারে সেই ছেলেটাও তাকে ভালবাসে না, সে অন্য কাউকে ভালবাসে এখন। খুব কষ্ট পেলো অনা, এ পৃথিবীর কেউ কি তাকে ভালবাসে না ? পৃথিবীর উপর অভিমান হলো অনার। অনার পাগলামির কারনে ব্যাপারটা বাসায় জানাজানি হলো। সবাই অনাকে বুঝালো এটা কোন ব্যাপার না, এ বয়সে এমন হয়।
বাবা মা বললো প্রার্থনা কর, বাইবেল পড় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অনা কিছুতেই বুঝলোনা, সে বেছে নিলো আত্মহত্যার পথ, খেয়ে নিলো একগাদা ঘুমের ঔষধ। সবাই মিলে অনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, জ্ঞান ফিরলে অনা দেখলো মা পাশে বসে কাঁদছে, সে কোন কথা বললোনা মায়ের সাথে। মা অনাকে সরি বলে, বললো আর কখনও বকবো না তোকে, একটু কথা বল।
মা অনার কানের কাছে মোবাইল ফোন ধরলো, বেঁজে চলছে ১ম করিন্থীয় ১৩:৪-৭ পদ (ভালবাসা সব সময় ধৈর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না, অহংকার করে না, খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও মন্দ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না, মন্দ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে। ভালবাসা সব কিছুই সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী, সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে।) অনামিকার সব অভিমান যেন মাটিতে মিশে গেল আস্তে আস্তে। সে আরও একবার শুনতে চাইলো কথা গুলো, সে কখনও ভাবতেও পারেনি বাইবেলে এত সুন্দর কথা আছে, কারন সে কখনো পড়েই দেখেনি বাইবেল। তখন তার মন অনুশোচনায় ভরে উঠলো, ঈশ্বর এত ভালবাসা দিয়ে নিপুন হাতে গড়েছে আমায়, আর আমি কিনা নষ্ট করতে যাচ্ছিলাম এই জীবন !! অনা এখন নিয়মিত বাইবেল পড়ে, এখন সে বাধ্য মেয়ে, হঠাৎ পাওয়া সেই ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য বদলে দিলো অনামিকার জীবন।