বছরব্যাপী আবাসিক এলাকায় রাজউকের অভিযান ৬৭ আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ
ফয়সাল খান: বছরব্যাপী রাজধানীর আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৬৭টি আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অভিযানের আগে আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন প্রায় ৩ হাজারের বোশি স্থাপনার তালিকা তৈরি করে সংস্থাটি।
জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ থেকে চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত পরিচালিত অভিযান সম্পর্কিত এক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জোন ৪ এর অধীনে গুলশান বারিধারা এলাকার ৫৫২টি ভবনের প্রথমিক তালিকা করে রাজউক, যার মধ্যে ২৫টি ভবনে বাণিজ্যক কার্যক্রম বন্ধ করেছে রাজউক। একই ভাবে জোন ৫ এর অধীন ধানমন্ডি লালবাগ এলাকায় ১৭৩টির মধ্যে এলাকায় ১৪টি, জোন ২ এর অধীন উত্তরা এলাকায় ২১৫টি ও টি এবং জোন ৬এর অধীনে বনশ্রী এলাকায় ১২টি আবাসিক ভবনে অবৈধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে রাজউক।
রাজউকের একটি সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা ভবনের নাম কোনোক্রমেই প্রকাশ করতে রাজি নয় রাজউক। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযানের জন্য যেসব তালিকা করা হয় সেই তালিকায় প্রতিষ্ঠান মালিকরা জানতে পারলে অভিযানের আগেই রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে যোগসাজোশে তালিকা থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নাম মুছে দেন। ফলে অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তবে, অভিযানের আগে পরে কোনো প্রকার তদবির বা অর্থের লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজউকের কর্মকর্তারা।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) আসমাউল হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, এ পর্যন্ত কোনো তদবির পাইনি। আমাদের এ উচ্ছেদ অভিযানে সবাই খুশি। আমরা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করছি। তবে পুলিশ না পাওয়ায় মাঝে মধ্যেই অভিযান বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজাউক কর্মকর্তারা জানান, আবাসিক এলাকার কোনো প্লটের বেজমেন্ট বা ভূ-তলের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বন্ধ রেখে তা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করলে সেগুলো উচ্ছেদ করার পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, হোটেল, বেসরকারি অফিস, মার্কেটসহ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনার তালিকা তৈরি করা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, মানুষের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় উচ্ছেদ করা খুব সহজ কাজ না। এছাড়া এসব অবৈধ স্থাপনার মালিকরা সবাই প্রভাবশালী। তাই একটু সময় নিয়ে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, আবাসিক এলকায় গড়ে তোলা অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে যতটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন তাই করা হবে। সমাজের কোনো প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনাই এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন না। এমনকি আবাসিক এলাকায় তার নিজেরও কোনো প্রকার বাণিজ্যিক স্থাপনা থাকলে তাও ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
জানা যায়, এসব স্থাপনাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই রাজউক থেকে আবাসিক স্থাপনার অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবসার জন্য নামমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের দেয়া এসব স্থাপনার ঠিকানা রাজউক নির্ধারিত কমার্শিয়াল এলাকায় দেয়া হলেও অনুমতি না নিয়েই সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। যদিও দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন যাবত আবাসিক এলাকায় কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান স্থাপন বন্ধ করতে এসব এলাকায় কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকার অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর প্রেক্ষিতে ২০ জুলাই সারাদেশের আবাসিক এলাকার ১২ হাজার ৯৫৭টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে নোটিস দেয়।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের আবাসিক প্লট ও ভবন থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়।