জলদানব ডুবোজাহাজ
সৈয়দ রশিদ আলম
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জার্মানির ডুবোজাহাজ, যাকে ইউবোট বলা হতো, সেই ডুবো জাহাজের সাহায্যে জার্মান নৌবাহিনী, মিত্র বাহিনীর একাধিক দেশকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ডুবোজাহাজ নির্মাণের দিকে মনোযোগ দেয়। প্রথম দিকের ডুবো জাহাজগুলো শুধুমাত্র টরপেডো বহন করত। টরপেডো মূলত শত্রুপক্ষের সব ধরনের যুদ্ধ জাহাজকে ধ্বংস করত। কিন্তু প্রতিপক্ষের রাডারের চোখে তখনকার নির্মিত ডুবো জাহাজগুলো ধরা পড়ে যেত। ৭০ দশকের পর থেকে বৃহৎ শক্তিগুলো পারমানবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ, পরমানু মিসাইল সজ্জিত ডুবোজাহাজ নির্মাণের দিকে মনোযোগ দেয়। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চীন অনেকটা এগিয়ে যায়। ভারতের নৌবাহিনীতে বর্তমানে যে তেরোটি ডুবোজাহাজ রয়েছে তা অত্যন্ত পুরাতন। সে কারণে রাশিয়া থেকে একটি পারমানবিক শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ লিজ নিতে যাচ্ছে। এর পূর্বে আরেকটি পারমানবিক শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ লিজ নিয়েছে। ফ্রান্সের কারিগরি সহায়তায় ৬টি ডুবোজাহাজ যৌথভাবে ফ্রান্সের সাথে নির্মাণ করছে। পাকিস্তানও বসে নেই। তার নৌবাহিনীতে চীন ও ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ সংযোজন করা হয়েছে। চীন ও ভারতের মধ্যে যে উত্তেজনা, আগামীতে যদি সীমিত পর্যায়ের নৌযুদ্ধ হয়, তাহলে ভারতের নৌবাহিনীর পক্ষে চীনের নৌবাহিনীর সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। চীনের নৌবাহিনীতে ৫৫টি ডুবোজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পারমানবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ, পরমানু বোমা বহনে সক্ষম মিসাইল সজ্জিত ডুবোজাহাজ যাকে সংক্ষেপে এসএলবিএম বলা হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে হান্টার কিলার ডুবোজাহাজ। চীন ও পাকিস্তানের দিকে নজর দিতে গিয়ে ভারতের নৌবাহিনীতে আগামীতে একাধিক ডুবোজাহাজের প্রয়োজন হবে। তা না হলে পুরাতন যুদ্ধ জাহাজ দিয়ে প্রতিপক্ষ দেশগুলোর সঙ্গে মোকাবেলা করা ভারতের নৌবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে না। ভারতের সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা এটা জানেন বলেই তারা ভারতের নৌবাহিনীতে একাধিক পারমানবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। ডুবোজাহাজকে বলা হয় জল দানব। জল দানব, হাঙ্গর যেভাবে তার প্রতিপক্ষকে গিলে ফেলে ডুবোজাহাজ নৌযুদ্ধে অনেকটা সেরকম কাজই করে থাকে।
লেখক: নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান