হকারদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার
জোনায়েদ সাকি
আমরা সবসময় বলে আসছি, বিকল্প কর্মসংস্থান না করে এভাবে উচ্ছেদ করা কোনো নীতি হতে পারে না। এটা গণবিরোধী নীতি। আমরা চাই জনগণের জন্য যেসব জায়গা রয়েছে তা উন্মুক্ত থাকুক। কিন্তু আজকে সরকারের যে নীতি সেই নীতি অনুযায়ী মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। মানুষ যখন নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন, তখন সেটাকে উৎখাত করা হচ্ছে, তাদের রুটি-রুজিকে উৎখাত করা হচ্ছে। আর এগুলো মূলত সরকারের যে ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন এবং তাদের দলীয় লোকজনরাই মূলত দখল করে আছে। দখল করে আবার তারাই চাঁদা তোলেন। এবং তারা বিভিন্ন জায়গা এভাবে দখল করেন। সেই সমস্ত দখল উৎখাত না করে, সাধারণ মানুষের উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থা না করে এইভাবে হকারদের উচ্ছেদ করা অত্যন্ত অমানবিক, গণবিরোধী। আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে দাবি করেছি এবং আমরা নিজেরাও এই বিষয়ে কথা বলেছি। সিটি করপোরেশনের মধ্যে হকাররা কীভাবে থাকবেন তাদের জন্য একটা নীতিমালা থাকতে হবে। সেই নীতিমালার ভিত্তিতে হকারদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেগুলোর কোনোকিছু না করে হুট করে একটা কাজ করা তারপরে শেষ পর্যন্ত আবার পুলিশের চাঁদাবাজির বা বিভিন্ন মাস্তানদের চাঁদাবাজির একটা ক্ষেত্র তৈরি করা, তাদের চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
সরকারের এই উৎখাত নীতি থেকে অবিলম্বে সরে এসে এ বিষয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা করা দরকার। তাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার। হকারদের তালিকা করা দরকার এবং তাদেরকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করে তার ভিত্তিতে যে পাবলিক স্থানগুলো আছে সেগুলো জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। কিন্তু জনগণের ব্যবহারের জন্য হকার উচ্ছেদ কতিপয় গোষ্ঠী কিংবা বা সরকারি লোকজনের দখলে যেন বাণিজ্যের জায়গাটা না হয়। আমরা দেখছি, জনগণের জন্য উন্মুক্ত যে জায়গা আছে সেগুলো নানানভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো হকারদের উৎখাত করা হয়। কিন্তু তারপরে আর জনগণের ব্যবহারের জন্য আর উন্মুক্ত থাকে না। এগুলো আবার নানানভাবে দখল হয়ে যায়। সেই সমস্ত দিকগুলো যাতে একটা নীতিমালার অধীনে থাকে।
ঢাকায় যারা শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে এমনিতেই তো তারা খুব দুর্দশার মধ্যে থাকেন। তাদের জন্য সরকারি কোনো আইনি অধিকার নেই, তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। হকারদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে তাদের জীবন-জীবিকাকে একটা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তাদের পরিবার-সন্তানদেরকে। কাজেই এটা তো কোনো সরকারের নীতি হতে পারে না। সরকারকে সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি করে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং এদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তার ভিত্তিতে এখানে যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তাই করতে হবে।
পরিচিতি: প্রধান সমন্বয়কারী, গণসংহতি আন্দোলন
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান