নাসিরনগরে পরিস্থিতি শান্ত, দুই মামলায় আসামি ২৪শ, গ্রেফতার-৮
নিয়ামুল ইসলাম আকুঞ্জী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক যুবক ফেসবুকে পবিত্র কাবাঘর নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র স্ট্যাটাস দেয়ার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সোমবার গোলযোগকারীদের চিহ্নিত করার পর দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ দুই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৪শ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটার পর সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালানোর অভিযোগে অন্তত ১৫ জন আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশের এএসপি জানান, রোববার ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়।
গত রোববার উপজেলার সদরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হওয়া এ হামলায় সার্বজনীন চারটিসহ অন্তত ১৫টি মন্দির ভাঙচুরের শিকার হয়। এছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে দেড়শ’র বেশি বাড়িঘরে। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০জন। হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়েও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কাজল দত্ত ও নির্মল দত্ত বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত ২৪শ জনকে আসামি করা হয়।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরের অপসারণ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। রোববার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র কাবাঘর নিয়ে কটাক্ষ করার ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে রোববার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ। সামাজিক শান্তি ও ধর্মীয় চেতনা রক্ষায় ব্যর্থতাসহ নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ দাবি করা হয়।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাশরুর উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, র্যাব-৯ এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি মো. আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তারা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া বলে আশ্বাস দেন।
অপরদিকে এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ/ মেরামত করার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মন্দির ও বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ/ মেরামত করার ক্ষতিগ্রস্ত ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়ায় হামলা হয়েছে। শ্রী শ্রী গৌর মন্দির, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, শ্রী শ্রী কালী মন্দির নামে চারটি সার্বজনীন মন্দির ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। ওইসব এলাকার অমূল্য দাস, জয় কুমার সূত্রধর, নিরঞ্জন গোপ, নিধু ঘোষ, বিনোদ ঘোষ, সুশীল সরকার, গোপাল সূত্র, মোহন লাল, হিরালাল দাস, মন্টু ঘোষ, সুব্রত সরকার, প্রদীপ দাস, সজল সরকার, সুজন দেব, কাজল জ্যোতি দত্তসহ অনেকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লোটপাটের দৃশ্য চোখে পড়ে। তাদের অনেকের বাড়ির ব্যক্তিগত মন্দিরও ভাঙচুরের শিকার হয়।