অক্টোবরে শিশু হত্যা ১৫ ও ধর্ষণের শিকার ৪৪ নারী-শিশু উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে শিশু ও নারী নির্যাতন
আজাদ হোসেন সুমন: গত অক্টোবরে দেশে ২২টি ক্রসফায়ার, ১৫ শিশু হত্যা ও ৪৪ জন নারাী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশে উদ্বেজনকহারে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ অবস্থা উত্তরণে সরকার ও বিরোধী উভয় দলকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অক্টোবরে মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অক্টোবরে ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয় ২২ জনের। এর মধ্যে পুলিশের হাতে ১০ জন, র্যাবের হাতে ১১ জন ও যৌথ বাহিনীর হাতে এক জন নিহত হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি নিধন অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়। এছাড়াও অক্টোবরে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৪ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ১৯ জন। ১৪ জন নারী। ১০ নারী গণধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে। হবিগঞ্জের বাহুবলে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে রাতভর দলবদ্ধ ধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। দিনাজপুরে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে নিন্দার ঝড় তোলে। তাছাড়া ১৪ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ১ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ১৫ শিশুকে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হয় ১০ জন শিশু। সিলেটে স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে বাবা খুন করে তার দুই সন্তানকে। রাজধানীতে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে এক রিকশাচালকের শিশু কন্যাকে হত্যা করে পাওনাদার। যৌতুকের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে ৩ নারীকে। নির্যাতনের শিকারও হয় ৫ জন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সন্ধ্যা নামে এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করেছে তার স্বামী। ঢাকার কেরাণীগঞ্জে শারমীন নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, বিচারহীনতার জন্য এমনটা হচ্ছে। কারণ থানাগুলো এখনো নারী ও শিশুবান্ধব হয়ে উঠেনি। নির্যাতিত নারী ও শিশু থানায় গিয়ে আইনের সহায়তা ঠিকমত পায়না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-পুলিশ অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে থানা থেকেই আপস রফা করে দেয়। এছাড়াও সারা দেশের নারী শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারকের অভাব। ফলে মামলা বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে আক্রান্তরা বিচার পায় না। যে কারণে অপরাধীরা আরও সক্রিয় হচ্ছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবীর বলেন, দেশে সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি হ্রাস পেলেও কি কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে সেটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। সরকার উদ্যোগ না নিলে এ ধরনের অপরাধ বাড়তেই থাকবে। গত শনিবার রাতে যমুনা টেলিভিশনের ‘টক শো’ ২৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লা ও আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এ ব্যাপারে রাজনীতিকদের আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, সরকারকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিকার সঙ্গে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। বিরোধী দলে যারা আছেন তাদেরও এবিষয়সহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করলে দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে তারা মন্তব্য করেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম