* বেড়েছে নারী নেতৃত্ব * জনসংখ্যার আনুপাতিকে কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির চমক তারুণ্য ও ছাত্র নেতৃত্বের প্রাধান্য
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এবারের কমিটির প্রধান চমক হলো তারুণ্য ও ছাত্র নেতৃত্বের প্রাধান্য পাওয়া। এছাড়া পুরনো কমিটির অপেক্ষাকৃত তরুণদের পদোন্নতি এবং আগের পদে বহাল রাখা হয়েছে। এবারের কমিটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো নারী নেতৃত্ব। আগের কমিটিতে এই হার ছিল ১১ শতাংশ। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ। যদিও এখনো ৮টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া তৃণমূলের পরিশ্রমী ও প্রতিশ্রুতিশীলরা যুক্ত হয়েছেন কমিটিতে।
এছাড়া কমিটিতে জনসংখ্যার আনুপাতিকে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। কমিটিতে সভাপতিম-লীর দুইজন সদস্যসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৫ জন, বৌদ্ধ ধর্মের একজন ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর একজন রয়েছেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, গণতন্ত্র ও নিয়ম মানার দল আওয়ামী লীগ। নতুন অনেক মুখ এসেছে কমিটিতে, তাই বলে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠদের প্রাধান্য কমেনি। নবীন ও অভিজ্ঞদের সমন্বয় করা হয়েছে কমিটিতে। আজ যারা তরুণ তারাই ভবিষ্যতে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাবে এবং দেশের দায়িত্ব নেবে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই এবারের কমিটির চমক।
কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের কমিটিতে ২৮ কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে নতুন রয়েছেন ১৮ জন। কার্যনির্বাহী সদস্যের ২৮টি পদে আগের অধিকাংশই বাদ পড়েছেন। নতুন যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। এছাড়া সম্পাদকম-লীতে নতুন চার সাবেক ছাত্রলীগনেতা পদ পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতিনিধিত্ব এবারের কমিটিতে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দলের জন্য অবদান রেখেছেন এমন নেতাদের এবারের কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়টি বিবেচনা করেছে দলের সভাপতিম-লীর সদস্যরা।
উপদেষ্টা পরিষদে তেমন পরিবর্তন হয়নি। নতুন যোগ হয়েছেন সাবেক তিন মন্ত্রীÑ শফিক আহমেদ, আ ফ ম রুহুল হক ও সতীশ চন্দ্র রায়। ৩৮ সদস্যের এ পরিষদে তাদের সঙ্গে আরও যোগ হয়েছেন বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। তিনি আগে কমিটিতে সম্পাদকম-লীতে ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদের নতুন যে ৫ জনকে আনা হয়েছে তারা হলেন, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, রশিদুল আলম, কাজী সিরাজুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, চৌধুরী খালেকুজ্জামান। পুরনোদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন।
নতুন ঘোষণা হিসাবে ২২ জনের সঙ্গে বন ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক পদে ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং উপ-প্রচার সম্পাদক হয়েছেন চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম। সম্পাদকম-লীতে যোগ হয়েছেন- মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মমতাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, নুরুল ইসলাম, দীপঙ্কর তালুকদার, বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, আমিরুল ইসলাম মিলন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, গোলাম কবীর রব্বানী চিনু, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, মেরিনা জাহান, শাম্মী আহমেদ, মারুফা আক্তার পপি, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও রেম- আরেং।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন মন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ কয়েকজন। এরমধ্যে রয়েছেন- সুভাষ বোস, একেএম রহমতউল্লাহ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, এমএ মান্নান, মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন মেহেদী, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।
গত কমিটির সদস্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এনামুল হক শামীম সাংগঠনিক সম্পাদক, সুজিত রায় নন্দী ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক, আমিনুল ইসলাম উপ-প্রচার সম্পাদক হন।
এর আগে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীতে সাত নতুন মুখ স্থান পেয়েছে। রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজ যাদের রয়েছে তাদের মধ্য থেকে সভাপতিম-লীর সদস্য করা হয়েছে। প্রেসিডিয়ামে নতুনদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিদায়ী শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাবেক দফতর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পীযূষ ভট্টাচার্য।
নারী নেতৃত্ব : আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ পদে স্থান পেয়েছেন নারীরা। গত কমিটিতে নারী নেতৃত্বের হার ছিল ১১ শতাংশ। ক্ষমতাসীন দলটি ক্রমান্বয়ে কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লী ও সম্পাদকম-লীতে সাতটি পদ এখনো খালি আছে। সেসব খালি রেখেই আওয়ামী লীগ ২০২০ সালের আগেই সাড়ে সাত শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাড়িয়েছে।
কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন মুখ হিসেবে বেশ কজন নারী এবার পদ পেয়েছেন। নতুন কমিটিতে অষ্টমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগের কমিটির মতোই সভাপতিম-লীতে ৩ নারী স্থান পেয়েছেন- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এছাড়া দলের উপদেষ্টা পরিষদের দুজন নারী হলেনÑ অধ্যাপক ড. হামিদা বানু ও অধ্যাপক সুলতানা শফি। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন ডা. দীপু মণি। সম্পাদকম-লীতে চারজন নারী স্থান পেয়েছেন। পুরনোদের মধ্যে কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছেন ৬ জন নারী। তারা হলেন- সিমিন হোসেন রিমি, মুন্নুজান সুফিয়ান, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান, ড. শাম্মী আহমেদ, মারুফা আখতার পপি। এদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি ও মুন্নুজান সুফিয়ান পূর্বের কমিটিতেও ছিলেন।
সম্পাদকম-লীর আরও চারটি পদে এখনো ঘোষণা হয়নি। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়া এবং উপ-দফতর সম্পাদক পদে এখনো নাম ঘোষণা করা হয়নি। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু