ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলা আর কত?
সৈয়দ রশিদ আলম
ইদানিং বিশ্ব মিডিয়ায় নিয়মিত খবর হচ্ছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গড়ে উঠেছে, সেই সামরিক জোটের পক্ষ থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে গত একবছর থেকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে, যে সামরিক জোটের অন্য সদস্য আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ওমান একই সঙ্গে ইয়েমেনে বিমান হামলায় অংশগ্রহণ করছে। ইয়েমেন হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সুন্নি। ক্ষুদ্র একটি অংশ হুতিশিয়া। হুতি সম্প্রদায় শিয়া মাজহাবের একটি ক্ষুদ্র অংশ। এরা মূলত, ইরানের প্রতি কিছুটা দুর্বল। সৌদি আরবের নেৃতত্বে যে সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শিয়াদের বিতাড়িত করা অথবা তাদেরকে সবসময় চাপের মধ্যে রাখা। কোনোভাবেই যেন শিয়ারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গড়ে উঠেছে, তাদের আকিদা হচ্ছে আবদুল ওহাব নজদির তৈরি করা ওহাবি/সালাফি। একসময় তারা নিজেদের ওহাবি বলে পরিচয় দিলেও এখন নিজেদের সালাফি বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এ সালাফি আকিদা বিশ্বাসকারীরা কোনো অবস্থাতেই প্রতিপক্ষ মতাবলম্বীদের মেনে নিতে পারেন না। মুসলিম বিশ্ব সব ব্যাপারে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও ইয়েমেনে সৌদি সামরিক জোটের বিমান হামলার ব্যাপারে নীরবতা পালন করছেন। এই বিমান হামলায় ৬ মাসের শিশু
থেকে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত প্রতিদিন নিহত হচ্ছেন। জানাযায় অংশগ্রহণকারীদেরও বিমান হামলা থেকে ক্ষমা করা হয়নি। একাধিক মসজিদ ও মাদরাসায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। মাটির সঙ্গে
সবকিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র ইরান ও লেবানন ছাড়া কোনো মুসলিম দেশ এই হামলার প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এই বিমান হামলাকে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইসরাইল সমর্থন করছে।
এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে হত্যা করছে, আর সমর্থন করছে কারা? এর রহস্য কী? মধ্যপ্রাচ্যে সারাজীবন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আগুন লেগে থাক এটাই চায় মানবাধিকার রক্ষাকারী দাবিদার বিশ্ববিবেক। ইয়েমেনে বিমান হামলায় ব্রিটেনের তৈরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টর্নেডো ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৫ ঈগল জঙ্গি বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এক মুসলমান দেশ আরেক মুসলমান দেশে হামলা চালাচ্ছে। আর অন্য মুসলমান দেশগুলো শুধু দেখে যাচ্ছে। কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে না। কারণ, সৌদি আরবকে ক্ষেপিয়ে দিলে আগামী দিনগুলোতে দান, খয়রাত বন্ধ হয়ে যাবে। এটাই যদি হয় রাজনীতি তাহলে এভাবে এক দেশ আরেক দেশের উপর হামলা চালাতে থাকবে আর বাকি দেশগুলো নীরবতা পালন করে যাবে।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান