এ কোন আওয়ামী লীগকে দেখলাম!
রবিউল আলম
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে কাউন্সিলর হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। প্রথম অধিবেশনে অংশ নিতে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ৭টায় টিএসসির গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম অধিবেশন স্থানে। কোথাও কোনোরকম বেগ পেতে হলো না। অথচ সারারাত চিন্তায় অস্থির ছিলাম হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কি হবে, কীভাবে কাউন্সিল অধিবেশনে প্রবেশ করব, কোথায় বসব, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে হবেÑ এ রকম নানা দুশ্চিন্তায় অস্থির ছিলাম। সম্মেলন স্থলে প্রবেশ করে প্রথমে চোখ পড়ল পানির যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে। দুই বোতল পানি নিলাম। সামনে এগোতেই দেখি মানুষের জটলা, সেখান থেকেও এক বোতল নিলাম। বসার জায়গায় গিয়ে দেখি প্রতিটি চেয়ারে এক বোতল পানি আর জুস। ভাবলাম, চেয়ারগুলো দখলে রাখার জন্য পানি আর জুস রাখা হয়েছে। অনেক কষ্টে একটি চেয়ার খালি পেয়ে তাতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আমার ভুল ভাঙল। আমার বসার পর পরই অতিথিদের স্রোত আসা শুরু হলো।
সারিবদ্ধভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রত্যেককে যথা স্থানে বসিয়ে দিচ্ছেন। কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও সম্মানিত অতিথিদের বসার স্থান আলাদা আলাদা। দুই-একজন আপত্তি করলেও নিয়মে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। অধিবেশন শুরু হলো। সভানেত্রী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করলেন, বিদেশি অতিথিরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করলেন। দুপুরের বিরতি দেওয়া হলো, কোথাও কোনো হৈ-হুল্লোড় নেই। এ কোন আওয়ামী লীগ দেখছি। দ্বিতীয় অধিবেশনও শান্তিপূর্ণ। পরদিনও সকালে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে হাজির হলাম। সকাল ৮টা থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হলো কাউন্সিলরদের। কাউন্সিল স্থলে প্রবেশ করে দেখলাম হাজার হাজার চেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ, কোথাও কোনো শব্দ বা বিশৃঙ্খলা নেই। যেন এক মহামিলন মেলা, সবাই একে অপরকে সহযোগিতা করছেন। সাড়ে নয়টার সময় সভানেত্রী আসন গ্রহণ করলেন। সামনে স্বেচ্ছাসেবকরা। কিছুটা উত্তেজিত কাউন্সিলররা, এই একটু সরেন, সরেন। প্রতিউত্তর আমরা আপনাদের সেবায় আছি। সেবা লাগবে না, আমরা নেত্রীকে দেখতে এসেছি, তার কথা শুনতে এসেছি, সামনে থেকে সরেন।
আমার সামনে রাজশাহীর চাঁপাই থেকে আসা, পিছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা কয়েকজন, তাদের কথা বলার ধরণ ও ভাষার ব্যবহার মনকে দোলা দিয়ে গেল। চরম বিস্মিত, একরকম ঘোরের মধ্যে তখন আমি। এ কোন আওয়ামী লীগ, এ কোন অধিবেশন? জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে গেলে, মানুষের ধাক্কার চোটে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ যে আসলে জনতার দল, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মহানগর আওয়ামী লীগের আগের সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে দুই ঘণ্টা আগে পৌঁছেও জায়গা পাওয়া যায় না। রাস্তায় আজ হাটা যায় না, শুধুই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকে ভরা। কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে এত মানুষ, এত শুভাকাক্সক্ষী কোথা থেকে এসেছে, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। সম্মেলন সময়জুড়েই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকেরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখেছিল। আনন্দ-উৎসব পরিবেশে সময় কাটিয়েছিল। অতিথিদের কথা শুনেছিল। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল। সবার সহযোগিতায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর একটি জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল। এটা ভাবতেই ভালোলাগায় ভরে যায় মন। নিজে নিজেই হাসি, তৃপ্তির হাসি।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান