মানবিক শেখ হাসিনা
মো. মিঠুন মিয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল একজন বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদই নন, মানবিকতায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ। এই গুণটি একজন রাজনীতিবিদকে সত্যিকারের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। শেখ হাসিনার এই গুণটি বরাবরই আমাদের চোখে পড়ে। দেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, অভিনেতা, শিশুসহ অসহায় ও সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ হচ্ছেÑ দেশের সৃজনশীল মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে করছেন। অসহায় মানুষের তাড়না তাকে প্রভাবিত করে, মানবিকতা জাগ্রত করে। শেখ হাসিনা ছুটে যান তাদের শয্যাপাশে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দায়ভার নেন চিকিৎসার। এমন অনেক দৃষ্টান্তস্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।
দেশের বিশিষ্ট নারী সাংবাদিক নুরজাহান বেগমের চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবীণ নারী সাংবাদিক নুরজাহান বেগমের চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং তিনি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। রোববার কবি হেলাল হাফিজের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান সরকার প্রধান। গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে কবি হেলাল হাফিজের সাক্ষাৎ হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কবির শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। কেবল তাই নয়, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অবরোধে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত ফেনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) আবদুল কাদের মিয়া ও ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার হৃদয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দরিদ্র ভ্যানচালক হাসমত আলী বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের আয় থেকে কিছু সঞ্চয় করতেন। তিনি সবসময় বলতেন, ‘শেখ হাসিনার কেউ নেই, ও আমার মেয়ে, ওর জন্য কিছু করতে হবে।’ জমানো টাকা দিয়ে ২০০৩ সালে গফরগাঁওয়ের খারুয়া বড়াইল গ্রামে পৌনে সাত শতাংশ জমি কেনেন। ২৪ হাজার টাকা দিয়ে কেনা জমির দলিল করেন শেখ হাসিনার নামে। অর্থের অভাবে হাসমতের চিকিৎসা হয়নি। তবুও জমিটুকু বিক্রি করতে দেননি। ৮০ বছর বয়সে প্রায় বিনা চিকিৎসাতেই তিনি মারা যান ২০০৪ সালে। হাসমত আলীর স্ত্রী রমিজা খাতুন এখন খুবই অসুস্থ, প্রাণ বাঁচাতে ভিক্ষা করেন। থাকেন রাজধানীর শ্যামলীর বস্তিতে। নিজের ছেলে সেই জমিটুকু পাবার জন্য তার ওপর অনেক নির্যাতন করেছে। কিন্তু রমিজা রাজি হননি। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন রমিজাকে খুঁজে বের করে চিকিৎসা দেওয়া এবং তার কাছে নিয়ে আসার জন্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে কালজয়ী কয়েকটি গানের স্রষ্টা স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও বর্ষীয়াণ কৌতুক অভিনেতা ফরিদ আলীর চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এ ‘ফরিদ আলীর পাশে কেউ নেই’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. লেনিনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খোঁজ নিয়ে ডা. লেনিন জানতে পারেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরিদ আলীর চিকিৎসা চলছিল। তবে অর্থাভাবে চিকিৎসা না চালাতে পেরে শেষ পর্যন্ত তাকে নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্কয়ার হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নেন সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার স্বাধীনতা পদকজয়ী বিশিষ্ট গীতিকবি নয়ীম গহরের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার ও মাহফুজা আক্তার শিলার পরিবারের বাসস্থানের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের পরিবার যাতে ভালো জায়গায় থাকতে পারে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ক্যান্সার আক্রান্ত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের চিকিৎসার সব দায়-দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির সন্তান মেঘের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া ককটেলে দগ্ধ ফেনীর এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনিকের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১২’ এর পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনেতা খলিল উল্লাহ খানের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। বাংলা চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য এ অনুষ্ঠানে অভিনেতা খলিলকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তার রিসিপশনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ ছিলেন মুহিতুল ইসলাম। সেই সময় চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু প্রিয় নেতাকে দেখেছেন নির্লোভ, নিজে লোভী হন কী করে? বলতে গেলে নিঃস্ব অবস্থাতেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। একটি মাত্র মেয়ে সানজিদা বিলকিছ বাঁধনের ভবিষ্যৎও গড়ে যেতে পারেননি তিনি।
মুহিতুলের আর্থিক অবস্থার কথা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তাই তার মেয়ের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান তিনি। মুহিতুলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে গিয়ে এই কথা জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা নজিব আহমেদ। কবি নির্মলেন্দু গুণ, অভিনেত্রী আমিরুনেসা খানম (রাণী সরকার) এবং এক সময়ের চিত্রনায়িকা শাহিনা শিকদারকে (বনশ্রী) ২০ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। কেবল তাই নয়, শেখ হাসিনা হয়েছে পিতা-মাতা হারাদের অভিভাবক।
এতিম কন্যাদের বিয়ে দিয়েছেন। নিয়েছেন তাদের দায়-দায়িত্ব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অব্যাহত রেখেছেন তার সাহায্য-সহযোগিতা। তার এমন কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান