ডেস্ক রিপোর্ট: গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জন্ম নিয়েছে দেশের প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক। ছানাটি গত মে মাসে জন্ম নিলেও রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয় বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান বলেন, জন্মের পর থেকে মায়ের থলেতেই ছিল ছানাটি। দুই মাস আগে থলে থেকে বের হলে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তিনি জানান, ২০১৪ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রেড ক্যাঙ্গারু প্রজাতির দুটি নারী ও একটি পুরুষ আনা হয়। দুটি মেয়ের মধ্যে একটি গত ৪ মে একটি মাদি বাচ্চা প্রসব করে। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাচ্চাটি থলে থেকে বের হয়। এখন সে অনেকটা বেড়ে উঠেছে। মা-বাবার সঙ্গে খেলছে, দৌড়াচ্ছে ও দুষ্টুমিতে মেতে উঠছে। রোগব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে শাবক জন্মানোর বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। কিপার মাসুদ হাওলাদার এদের খাবারসহ যাবতীয় তত্ত্বাবধান করছেন।
পার্কের আরেক বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক সরোয়ার হোসেন খান জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ক্যাঙ্গারুগুলোকে বরবটি, পালংশাক, গাজর, পাকা কলা, আপেল, শসা, কচি ঘাস খেতে দেওয়া হলেও বাচ্চাটিকে আলাদা কোনো খাবার দেওয়া হচ্ছে না। সে মায়ের দুধই খাচ্ছে। ক্যাঙ্গারু ছানা সাধারণত ২৩০-২৩৫ দিনের মতো মাতৃদুগ্ধ পান করে।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী ক্যাঙ্গারুর মূল আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়ায়। এছাড়া পাপুয়া নিউগিনি, তাসমানিয়ার আশপাশের দ্বীপগুলোয় এদের দেখা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যাঙ্গারু ১২ থেকে ১৬ বছর এবং আবদ্ধ অবস্থায় ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। পৃথিবীতে ৫০ প্রজাতির ক্যাঙ্গারু আছে বলে জানান সরোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, সুস্থ-সবল ক্যাঙ্গারু দুই বছরে তিনবার বাচ্চা প্রসব করে। এরা প্রজননের জন্য মিলিত হওয়ার মাত্র ৩৩ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয়। প্রসবের সময় ক্যাঙ্গারুর শাবক আকারে খুবই ছোট (৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার) ও লোমহীন থাকে। শরীর থাকে গোলাপি বর্ণের। জন্মের পর বাচ্চা মায়ের পেটের থলেতে অবস্থান নেয়। সেখানে স্তনের দুধ পান করে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। তিন মাস পরে থলে থেকে মুখ বের করে। এ সময়ের মধ্যে শাবকের গায়ে লোম ও হাত-পা দৃশ্যমান হয়। বয়স চার মাস হলে শাবক চলাফেরার উপযোগী হয়। তখন সে থলে থেকে বের হয়ে বাইরে আসে। দৌড়-ঝাঁপ শেষে আবার থলেতে অবস্থান নেয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক সহকারী বন সংরক্ষক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গত বছর সিংহী বাচ্চা প্রসব করেছে। কিছুদিন আগে সাদা ময়ূর পাঁচটি বাচ্চা দিয়েছে। সর্বশেষ ক্যাঙ্গারু দম্পতির ঘরে বাচ্চা এসেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই জিরাফ ও সিংহ দম্পতির সংসারে নতুন অতিথি আসছে। এসব অতিথি দর্শনার্থীদের অন্য রকম আনন্দের কারণ হবে। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী