হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক নাসিরনগর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, এখানকার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে। পরে নাসিরনগর গৌরমন্দিরে এক সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নাসিরনগরে যা ঘটেছে, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। এই এলাকায় ৪৪ হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছে। তারা যাদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করেছেন, সেই জনপ্রতিনিধি আজ কোথায়। গত চারদিনে তিনি একবারও এখানে আসেননি।
হিন্দুদের উদ্দেশে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এরপর তিনি (জনপ্রতিনিধি) যদি এখানে আসেন, তাহলে আপনারা কালো পতাকা প্রদর্শন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ হাজার, ১০ হাজার বা ২০ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এ ঘটনা তদন্তে আমরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি দাবি করছি।’
এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজল দেবনাথ, জয়ন্ত সেন, জে এল ভৌমিকসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। পরে রানা দাশগুপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করে শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা করেন।
এদিকে, গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র.আ.ম.উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি হারিপুর গ্রামে বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ঘটনাস্থলের মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
সাংবাদিকদের সুলতানা কামাল বলেন, এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কাজেই তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তাতে সত্য উঠে আসবে না। এ কারণে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা নিরপেক্ষ নাগরিকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, হিন্দুদের মন্দির-বাড়িঘরে যে হামলা হচ্ছে, তা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। যারা এসব হামলা করে, তারা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
সুলতানা কামাল বলেন, এখানে কারা সমাবেশ করেছে, কারা অনুমতি দিয়েছে, সেগুলো সবার জানা। তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের যারা শক্তি, তারা যেন কোথাও আপস না করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গতকাল ঘটনা তদন্তে নাসিরনগরে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে তারা কথা বলেছে।
সাংবাদিকদের এনামুল হক চৌধুরী বলেন, একাত্তরে যেভাবে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গেও তার মিল রয়েছে। এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কেন, কী কারণে এখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সম্পাদনা: আনোয়ার