গুলশান হামলার দুই জঙ্গি কলকাতায় ধরতে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ
বিশ্বজিৎ দত্ত : ঢাকার গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার যাবতীয় রসদ ও সরঞ্জামের ব্যবস্থাকারী জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (নতুন) দুই জঙ্গি পশ্চিমবঙ্গেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের ধরার জন্য ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) সাহায্যও চেয়েছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিইউ)। গুলশান হামলার সঙ্গে যুক্ত ওই দুই জঙ্গির একজন হলো মামুনূর রশিদ রিপন ওরফে জাহাঙ্গীর এবং অপরজন শরিফুল ইসলাম খালেদ। সিসিটিটিইউর যুগ্ম কমিশনার আমিনুল ইসলাম জানান, ভারতের এনআইএর সঙ্গে একটি কর্মসূচিতে আমাদের দুজন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেছে। তারা গত মঙ্গলবার দেশে ফিরে এসেছে। সেখানে তারা বেশকিছু বিষয়ে কাজ করেছে এর বাইরে তেমন কিছু বলতে পারব না।
পুলিশ সূত্র জানায়, খালেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। গত ২৫ এপ্রিল থেকে এ দুই জঙ্গি এদেশে রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন সেখানকার গোয়েন্দারা। এমনকী তারা মাঝেমধ্য কলকাতার একটি হোটেলেও দুদিন কাটিয়ে গিয়েছে। প্রথমদিকে মালদহ, বীরভূম, কলকাতা ও হাওড়ার ডেরায় কিছুদিন কাটিয়ে তারা দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি ডেরা পালটে আবারো পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিমের খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এই দুই জঙ্গিকে এপারে আশ্রয় দিয়েছিল বর্ধমান থেকে ধৃত আইএস জঙ্গি মহম্মদ মসিরউদ্দিন ওরফে মুসা। গুলশান হামলার জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহে রিপন ও খালেদের সঙ্গেই মালদহের কালিয়াচক সীমান্তের এক গ্রামে বৈঠক করেছিল মুসা। পরে মধ্য কলকাতার ওই হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল সে। বাংলাদেশ থেকে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে এনআইএর গোয়েন্দারা বলছেন, ধরাপড়ার পর জেরায় আইএস সমর্থক দুই বাংলাদেশি জঙ্গির উল্লেখ করেছিল মুসা। তাদের সঙ্গে বৈঠক, গুলশান হামলার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া এবং অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের বিষয়েও জানিয়েছিল সে। দুই বাংলাদেশির মধ্যে একজনের সাংগঠনিক নাম ‘সুলেমান’ এবং অপরজনকে ‘বাংলার বাঘ’ নামে চিনত, এমনটাও জানিয়েছিল মুসা। জেরায় মেলা তথ্য এবং নানা প্রমাণের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা এখন বলছেন, মুসা বর্ণিত সেই সুলেমান হলো আসলে শরিফুল ইসলাম খালেদ ওরফে জাহাঙ্গীর এবং বাংলার বাঘ আর কেউ নয়, সে মামুনূর রশিদ রিপন। সিটিটিইউ সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই জঙ্গির সঙ্গেই এ মুহূর্তে তামিম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত নিউ জেএমবির ‘আমির’ তথা খাগড়াগড়কা-ের অন্যতম অভিযুক্ত সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে ভাগ্নে সোহেল এবং জুনায়েদ হোসেন খান ওরফে বিগ ব্রাদারও ভারতের কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এ দুজনের বিষয়েও খোঁজখবর করার জন্য এনআইএকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বানাতে পারদর্শী সোহেল মাফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা খাগড়াগড় পর্বে গ্রেনেড বানাতে শিখিয়েছিল সহযোগী জঙ্গি-জেহাদিদের। ওই একই ধরনের গ্রেনেড গুলশান হামলার সময়েও হাতকাটা নাসিরুল্লা সরবরাহ করেছিল বলে ইতোমধ্যেই জানা গেছে। মুসাকে জেরা করে নাসিরুল্লার বিষয়েও জানা গিয়েছিল।
এনআইএর গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে ভারতের দৈনিক বর্তমান লিখেছে, গুলশান হামলায় অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক জোগাড় করার ভার ছিল রিপন ও খালেদের উপর। এ কাজে তারা এপারের সহযোগী মুসার সাহায্য নিয়েছিল। নেপাল থেকে একে-২২ রাইফেল এবং মুঙ্গের থেকে নাইন এমএম পিস্তল বাংলাদেশি সতীর্থদের জন্য জোগাড় করে দিয়েছিল মুসা। এমনকী বিহার থেকে বিস্ফোরক পাওয়ার জেল এবং ডিটোনেটরও জোগাড় করে তা বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল রিপন ও খালেদ। সিটিটিইউ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খুনের ঘটনায় জড়িত খালেদের খোঁজে ৩০ লাখ বাংলাদেশি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, অধ্যাপক খুনের পরের দিনই চোরাপথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পার করে বৈষ্ণবনগর হয়ে মালদহে আসে রিপন ও খালেদ। মালদহ স্টেশনে তাদের সঙ্গে দেখা করে মুসা। গোয়েন্দারা বলছেন, শুধু রিপন আর খালেদই নয়, গুলশান কা-ে জড়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বসিরউল্লা ওরফে রাহুল ওরফে চকোলেট এবং নিউ জেএমবির অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে টাইগার ওরফে শান্ত ওরফে আদিল ওরফে রাজীব গান্ধীও ভারতে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। সম্পাদনা: আনোয়ার