প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই তিস্তার আলোচনা চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরই তিস্তার জন্য সুখবর বয়ে আনবে। বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক আগামী ৯ ও ১০ নভেম্বর দুদিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতি ও সফরের এজেন্ডা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই দেশের সরকারপ্রধান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সফরেই তিস্তার জট খোলা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিস্তা ইস্যুতে কিছুটা বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও আলোচনা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলেছে, ৩ ডিসেম্বরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে তিস্তার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দেশটিতে যাচ্ছেন। এদিন বিকালেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাতের কথা রয়েছে। শেখ হাসিনার এ সফরকেও ঐতিহাসিক করে রাখতে চান মোদি। গতবছরের জুনে মোদির বাংলাদেশ সফরটিও ছিল ঐতিহাসিক। দীর্ঘ ৬২ বছরের অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল সেই সময়। গত মাসে ভারতের গোয়ায় বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে মোদি তিস্তা বিষয়ে শেখ হাসিনাকে এ আভাস দিয়েছেন বলে কূটনৈতিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, তিস্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সব নথিপত্র ২০১১ সাল থেকেই প্রস্তুত। এখন আবার নতুন করে যাচাই বাছাই করাও শেষ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই দেশের মধ্যকার আলোচনায় তিস্তার বিষয়টি ১ নম্বর এজেন্ডা রাখা হচ্ছে।
আগামী ১০ নভেম্বর পররাষ্ট্র সচিবের ভারত সফরে এজেন্ডাসহ শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের অন্যান্য দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে তিস্তা চুক্তিসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফরের পর সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তখন শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করা হবে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে গত সপ্তাহে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তিস্তার নথিপত্র গোছানো হচ্ছে। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালেই তিস্তা চুক্তি হবে। সেখানে চুক্তির আগের ড্রাফট অনুযায়ী তিস্তার পানি দুদেশের মধ্যে ফিফটি-ফিফটি বণ্টন হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশ এখনো ওই ড্রাফটেই অটল রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এখনো কেন্দ্রের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। মমতার দাবি পানি বণ্টনের হিসাব বাংলাদেশ-ভারত ৪০ ও ৬০ শতাংশ করা হোক। তিনি চান, তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আরও বেশি পানি রেখে বাংলাদেশকে কিছুটা কম দেয়া যায় কিনা। হাসিনা ও মোদির মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে পানি সমান ভাগাভাগি হবে নাকি বাংলাদেশকে কিছুটা কমিয়ে চুক্তি হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আলোচ্যসূচিতে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, যৌথভাবে সন্ত্রাস দমন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে উভয় দেশ কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া গত বছর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ জানান, তিস্তার বিষয়ে আমাদের আগেরই প্রস্ততি রয়েছে। ২০১১ সালের ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ছিল এবং সেটিতেই বাংলাদেশের সম্মতি আছে। ওই সময় তিস্তাচুক্তি হয়নি পশ্চিমবঙ্গের আপত্তিতে। এখন এ ব্যাপারে সে দেশের পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্র কিভাবে সমঝোতা করবে সেটি তাদের ব্যাপার। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত