নবীজীর জানাজা!
হুমায়ুন আইয়ুব: ইবনে মাজাহ শরিফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মঙ্গলবার সাহাবায়ে কেরাম রাসুলে কারিম (সা.)-এর গোসল ও কাফনের কাজ শেষ করেন। নবীজীর দেহ মোবারক রওজার পাশে রাখেন। সাহাবারা দল দলে নবীজীর কাছে আসতে থাকেন। কারও ইমামতিতে নয়; সবাই একা একা নামাজ ও দুরুদ শেষে বেরিয়ে যান। (ইবনে মাজাহ)।
অন্য কিতাবে আছে, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের আগে সাহাবিরা নবীজীর দরবারে আসলেন। সাহাবাদের দেখে নবীজীর চোখে বেদনার জল। নবীজী বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহর কাছে সোপর্দ করছি, আল্লাহ তোমাদের সঙ্গী হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার যাওয়ার সময় খুব নিকটে চলে এসেছে, আপনার ইন্তেকালের পর আপনাকে কে গোসল দিবে? রাসুল (সা.) বললেন, আমার আহলে বাইত মানে আমার পরিবারের সদস্যরা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন, কে আপনাকে কাফন পরাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আমার আহলে বাইত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন কে আপনাকে কবরে নামাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আমার আহলে বাইত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন কে আপনার জানাজা পড়াবে? তখন রাসুল (সা.)-এর চোখ বেয়ে বেদনার জল নেমে এলো। তিনি বললেন, তোমাদের নবীর জানাজা এমন হবে না, যেমন তোমাদের হয়। যখন আমার গোসল হয়ে যাবে তখন তোমরা সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। সবার আগে জিবরাইল আমার জানাজা পড়বে। তারপর মিকাঈল ও ইস্রাফিল ধারাবাহিকভাবে আরশের অন্যান্য ফেরেশতারা আসবে ও আমার জানাজা পড়বে। তারপরে তোমাদের পুরুষরা, নারীরা এবং শিশুরা আমার জন্য দোয়া ও সালাম পড়বে। অতঃপর তোমরা আমাকে আল্লাহর সোপর্দ করে দিবে। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/২২২, দালায়েলুন নবুয়্যাহ লিলবায়হাককি)।
নবীজী (সা.)-এর জানাজা বিষয়ে আরও দীর্ঘ হাদিস পাওয়া যায় তিরিমিজি শরিফে। সাহাবি হযরত সালেম বিন ওবায়েদ (রা.) বলেন, আমি প্রথমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কে রাসুলে কারিম (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ দিই। তখন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আমাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে ভেতরে আসো। সাহাবি হযরত সালেম বিন ওবায়েদ (রা.) বলেন, হযরত আবু বকর (রা.) যখন রাসুলের নিকট যেতে চাইলেন, তখন চারপাশে মানুষের প্রচ- ভিড়। হযরত আবু বকর (রা.) লোকদের বললেন, তোমরা আমাকে সামান্য রাস্তা দাও! লোকেরা ভেতরে যাওয়ার পথ করে দিল! তিনি ভেতরে গেলেন, মাথা নুইয়ে কাছে গিয়ে নবীজী (সা.) কে দেখলেন। নবীজীর পবিত্র কপালে হযরত আবু বকর (রা.) চুমু খেলেন। তারপর কোরআনের আয়াত পড়লেন, যার অর্থ হলো, নিশ্চয় তুমিও ইন্তেকাল করবে এবং তারাও ইন্তেকাল করবে।
হযরত আবু বকর (রা.) বেরিয়ে এলে; লোকেরা জানতে চাইলেন, ওগো নবীজীর বন্ধু! নবীজী কি ইন্তেকাল করেছেন? হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, হ্যা। তখন লোকেরা নবীজীর ইন্তেকালের খবর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলো। তারপর সাহাবায়ে কেরাম হযরত আবু বকর (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ওগো নবীজীর বন্ধু! নবীজীর কি জানাজার নামাজ পড়া হবে? তিনি বললেন, হ্যা। জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে? হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, এভাবে যে, এক এক জামাত নবীজীর ঘরে প্রবেশ করবে এবং জানাজা পড়ে বেরিয়ে আসবে। তারপর অন্য জামাত প্রবেশ করবে। সাহাবারা হযরত আবু বকর (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজীকে কি দাফন করা হবে? তিনি বললেন, জি। জিজ্ঞাসা করা হল, কোথায়? তিনি বললেন, যেখানে আল্লাহ তায়ালা নবীজীর রুহ কবজ করেছেন সেখানেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় নবীজীকে এমন স্থানে মৃত্যুদান করেছেন যে স্থানটি উত্তম ও পবিত্র। সাহাবারা দৃঢ়ভাবে মেনে নিলেন হযরত আবু বকর (রা.)-এর কথা। হযরত আবু বকর (রা.) নিজেই নবীজীর আহলে বায়াত তথা রাসুলের পরিবার ও বংশের মানুষদের ডেকে গোসল নির্দেশ দেন। (সূত্র : শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৯, ৩৯৭, শরফুল মুস্তফা, বর্ণনা নং-৮৫০, আল আনওয়ার ফি শামায়িলিন নাবিয়্যিল মুখতার, বর্ণনা নং-১২০৯)।
ইমাম শাফি (রহ.) এবং কাজি ইয়াজ (রা.) বলেন, নবীজী (সা.)-এর জানাজা পড়া হয়েছে। (কিতাবুল উম্মু/ সিরাতে মস্তফা/৩য় খ-: ২৩৫)।
পুনশ্চ : নবীজীর জানাজা হয়েছে। সাহাবারা একা একা পড়েছেন। কেউ ইমামতি করেননি। তবে তাবাকাতে ইবনে সাদের বরাতে বলা হয়, হযরত আবু বকর ও ওমর (রা.) এক সঙ্গে নবীজী (সা.)-এর ঘরে উপস্থিত হন। নবীজীর দেহ মোবরক সামনে রেখে নামাজ-সালাম ও দুরুদ পেশ করেন। দীর্ঘ দোয়ার সময় পেছনে সারিবদ্ধ সাহাবিরা আমিন আমিন বলেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫ম খ-: ২৬৫)। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম
যড়সধঁহধুঁন@ুধযড়ড়.পড়স