নাসিরনগরে কয়েকটি ঘরবাড়িতে আবারো অগ্নিসংযোগ
রিকু আমির ও তৌহিদুর রহমান নিটল, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের পাঁচটি হিন্দু বাড়ির ছয়টি ঘরে একই সময়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব ঘরে কেউ বসবাস করে না। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে এসব বাড়ির গৃহকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় আমাদের অর্থনীতির।
আগুনে শীল পাড়ার কেশব চক্রবর্তীর লাকড়ির ঘর পুড়ে গেছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি টের পান আগুন লেগেছে। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পাননি। পশ্চিম পাড়ার সাগর দাসের বাড়িতে দুর্গাপ্রতিমা রাখা ম-পে আগুন লাগে। এতে প্রতিমাসহ পূজার সরঞ্জাম সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ম-প ঘেঁষা তার বসত বাড়ি। সাগর দাস থাকেন ভারতে। এখানে থাকেন তার নিকটাত্মীয় গোবর ধন দাস। তিনি জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি টের পান আগুন লেগেছে এবং ৫-৬ জনের দৌঁড়ে পালানোর শব্দও শোনেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি।
বণিক পাড়ার অমর দেবের বাড়িতেও আগুন লাগে। এতে ভস্মীভূত হয় তার রান্নাঘর। তার স্ত্রী পুতুল দেব জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি টের পান যে আগুন লেগেছে। হাসপাতালপাড়ার ফুলকিশোর সরকারের লাকড়ির ঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে আগুনে। তার প্রতিবেশী মৃণাল কান্তি সরকারের লাকড়ির ঘর ও রান্না ঘরও পুড়ে গেছে। তারা দুজনেই জানান- রাত তিনটার দিকে তারা আগুন লাগার বিষয় টের পান।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ জানা গেছে। তারা বলেন, প্রথমত: আগুন লাগানো হয়েছে একই সময়ে। দ্বিতীয়ত, এমন সব ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে, যেখানে মানুষ বাস করে না। তারা সন্দেহ করছেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সঙ্গে উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত চক্রবর্তীর কড়া বিরোধিতা থেকে কোনো একপক্ষ আরেপক্ষকে ঘায়েল করতে এটা ঘটিয়েছে।
এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর সঙ্গে ছায়েদুল হকের ঘোরতর বৈরিতার সূত্র থেকে এটা হতে পারে বলেও অনুমান করেন স্থানীয়রা।
এদিকে, এই ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক মুসলমান অভিযোগ করেন- মুসলমানদের উপর দায় চাপাতেই এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি আরও বেড়েছে। অগ্নিকা-ের শিকার ফুল কিশোর সরকার বলেন, যে অবস্থা হয়েছে, তাতে ভীষণ ভয়ে আছি। কখন না আমাদের থাকার ঘরেই আগুন দিয়ে দেয়। অমর দেব বলেন, আসলে আমরা আছি কোথায়? নাসিরনগরের পরিবেশ তো এমন ছিল না। আমরা কোথায় যাব? দেশ ছেড়ে দেব?
নাসিরনগরে ভাঙচুর ও লুটপাটের পাঁচ দিন পার হতে না হতে আবারো গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রোববার নাসিরনগরে প্রায় ১৫টি মন্দির ও ৬০-৭০টি হিন্দু বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।
এই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে নতুন করে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছে যদিও প্রশাসন সমস্ত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলে সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কাছে দাবী করছে, তাহলে আবারো নাসিরনগরে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা কীভাবে সৃষ্টি হল। তাদের ব্যর্থতা আবারো প্রমাণিত হল নাসিরনগরের মাটিতে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় নাসিরনগরে অতিরিক্ত আরও শতাধিক ফোর্স বেশি ছিল। কিন্তু ঘটনাতো হঠাৎ ঘটেছে। একটি মহল এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। টহল পুলিশ আরও বাড়ানো হবে ও একটা অস্থায়ী র্যাব ক্যাম্প করা হবে নাসিরনগরে। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম