তদারকিতে ডিএমপির ৮ জোনে ৮ পদস্থ কর্মকর্তা থানাগুলোকে জনবান্ধব করতে নতুন উদ্যোগ
সুজন কৈরী : রাজধানীর থানাগুলোর বিভিন্ন সমস্যা নিরসন, সেবার মান বৃদ্ধি ও থানাগুলোকে জনবান্ধব করতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এজন্য ডিএমপির ৮ পদস্থ কর্মকর্তাকে ৪৯ থানা তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া জারি করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
নির্দেশ পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাজধানীর থানাগুলো পরিদর্শন করেন। থানার ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় থানার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসন, থানাগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে ওই বৈঠকে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ডিএমপির ৮টি জোনে অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার ৮ পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে থানা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তাদের দায়িত্ব থানার সার্বিক কর্মকা- ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করা। সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য ওসি, ডিসিদের পাশাপাশি এই ৮ কর্মকর্তাকে পুলিশ কমিশনারের কাছে জবাবদিহিও করতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকা- সম্পর্কে তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবেন।
জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে গুলশান জোনে যুগ্ম কমিশনার (প্রটেকশন অ্যান্ড ডিপ্লেমেটিক সিকিউরিটি)
আতাউল কিবরিয়া, মিরপুরে যুগ্ম কমিশনার (পিওএম) ইমতিয়াজ আহমেদ, তেজগাঁওয়ে যুগ্ম কমিশনার (সদর দফতর) আনোয়ার হোসেন, লালবাগে যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, উত্তরায় যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মীর রেজাউল আলম, ওয়ারীতে যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিক) ওয়াই এম বেলালুর রহমান, মতিঝিলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিক, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) জামিল আহমদ এবং রমনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) শাহাব উদ্দীন কোরেশী রয়েছেন।
সূত্র জানায়, কমিশনারের দেওয়া ওই আদেশে কোনো আসামিকে আটকের পর গাড়িতে রেখে তদবির কিংবা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, বিভাগীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছাড়া থানা থেকে সিভিল টিম বের না করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কিছু সদস্যকে হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা আমলে নিয়ে হয়রানি বন্ধে পেন্ডিং মামলায় কাউকে শ্যোন অ্যারেস্ট করতে হলে সংশ্লিষ্ট জোনাল এসির অনুমতি লাগবে। আদেশে বলা হয়, মাদক বা অস্ত্র দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা না দেয়া, একই কর্মকর্তা প্রতিদিন একই ধরনের ডিউটি না করা এবং মামলার তদন্ত শেষে দ্রুত নিষ্পত্তি করা, মাঠ পুলিশের সেবা বাড়াতে নিয়মিত ও কার্যকর উঠান বৈঠকের আয়োজন করা, সংগৃহীত ভাড়াটিয়ার তথ্য দ্রুত তদারকি, যাচাই বাছাই ও মুলতবি থাকা অনিষ্পন্ন আলামত প্রসিকিউশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা। কমিশনারের আদেশে আরও বলা হয়েছে, জঙ্গি প্রতিরোধে ব্লক রেইড ও চেকপোস্টে তদারকি, নিখোঁজ যুবকদের তালিকা করে অনুসন্ধান ও তদারকি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ব্যক্তি এবং বিদেশিদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্মœ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষষ্ণপদ রায় বলেন, চিঠি পাওয়ার পর আমরা প্রতিটি থানায় গিয়েছি। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ সময় তাদের কি কাজ করা যাবে আর কি করা যাবে না তার নির্দেশনা দেয়া, থানার হেফাজতে ব্যবহৃত মালামাল ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা, কিভাবে থানাগুলোকে জনবান্ধব করা যায় তার পরিকল্পনা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্রিফ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা খুব শিগগিরই আবারও নিজ নিজ এলাকার থানাগুলো পরিদর্শনে যাবো এবং বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসি, এসি ও ওসিসহ সকল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন