আজ শেষ হচ্ছে নতুন সদস্যের প্রশিক্ষণ জিম্মি উদ্ধার ও জঙ্গি দমনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে সোয়াট
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: জিম্মি উদ্ধার ও জঙ্গি দমনে ‘ক্রিস সুপার ভি সাবমেশিনগানসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস (সোয়াট) মাঠে নামছে। আজ নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ শেষ হচ্ছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত থাকবেন।
বর্তমানে সোয়াট টিমের জনশক্তি ৫০ জন রয়েছে। আরও বেশকিছু পুলিশ সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সোয়াটকে পৃথক একটি ব্যাটালিয়ন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সোয়াটকে শক্তিশালী টিম গড়তে ইতোমধ্যেই ২০০টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র (ক্রিস সুপার ভি সাবমেশিনগান) ও ৫০ হাজার রাউন্ড গুলি দেওয়া হয়েছে। এ অস্ত্রগুলো তুলনামূলক হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় তা জনবহুল জায়গায় অপারেশনের কাজে ব্যবহার করা হবে। আর এই অস্ত্রের সঙ্গে আমেরিকা থেকে কারবাইন রাইফেল, ব্লক সেভেনটিন পিস্তল এবং রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এসেছে। এছাড়া, ১২ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে দুটি সোয়াট ভ্যান (অত্যাধুনিক বুলেট প্রুফ ভ্যান)। এই সোয়াট ভ্যানের চাকা গুলিবিদ্ধ হলেও তা ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে পারবে নির্বিঘেœ।
জিম্মি উদ্ধারসহ অপারেশন চালানোর কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, সোয়াট টিমের ৫০জন সদস্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের এন্টি টেরোরিজম অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া সোয়াট টিমের সদস্যরা দেশীয় ট্রেনিংও নিয়েছেন। সোয়াটের ২০ সদস্যের একটি টিম সিলেটের স্কুল অব ইনফরমেটি অ্যান্ড ট্রেকটিসে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে সেনাসদস্যরা তাদের হেলিকপ্টার রেপলিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর হাইরাইজ ভবনে অপারেশন চালানো বা অগ্নিকা-ে উদ্ধারতৎপরতা চালাতে এই ট্রেনিং কাজে লাগবে বলে জানিয়েছেন সোয়াটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা।
ইউরোপ ও আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে সোয়াট টিম এলিট ফোর্স হিসেবে বিবেচিত হয়। যেসব অভিযান সাধারণত পুলিশের পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব নয়, সেসব ঝুঁকিপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালায় সোয়াট টিম। কোনো হাই প্রোফাইল ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হলে বা বড় ধরনের জঙ্গি হামলা হলে আক্রান্তদের উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের গ্রেফতারের কাজই করে সোয়াট টিম। ভারতের তাজ হোটেলে জঙ্গি হামলা এবং বোস্টনে একটি বিমান সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়লে সোয়াটের সদস্যরাই অভিযান চালায়।
বাংলাদেশে এই সোয়াট টিম গঠনের জন্য ২০০৮ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বাছাই করা ২৪ জনের একটি টিমকে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য আমেরিকা পাঠানো হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে আমেরিকার পক্ষ থেকে এই টিমের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান সরঞ্জাম দেয়া হয়। এরপর ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেশে ফিরে সোয়াট নামে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করে। বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করতেই এ টিম গঠন করা হয়। এরপর রাজধানীর বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে জিম্মি উদ্ধারসহ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধারসহ জঙ্গিদের গ্রেফতার করে। শুরুতে এর সদস্য ২৪ জন থাকলেও এখন অর্ধশত সদস্য রয়েছে।
জিম্মি ব্যক্তিকে উদ্ধার, জঙ্গি হামলা মোকাবিলা ও ছিনতাইকৃত বিমান উদ্ধার সংক্রান্ত সোয়াট টিমের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিলেও গত ৬ বছরে এই টিম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ এবং বিজয় দিবসসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছে এই সোয়াট টিম। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম