নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলা লুট : ৫৭ ভরি সোনা ও নগদ ১১ লাখ টাকা
রিকু আমির, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সোনা, রুপা ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট। এরমধ্যে রয়েছেÑ ৫৭ ভরি সোনা, ১০২ ভরি রুপা, নগদ ১১ লাখ টাকা। তাছাড়া ৫৮টি বসত বাড়ি ও ১৪টি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও শত বছরের পুরনো একটি স্বর্ণমূর্তি লুট হয়েছে এ সময়।
বসত বাড়ি থেকে যত সোনা-রুপা লুট : উপজেলার চারটি পাড়া মহল্লার ১৭টি বসতবাড়ি থেকে ২৮ ভরি সোনা ও একটি বসতবাড়ি থেকে ২ ভরি রুপা লুট করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বপাড়ার সজল সরকারের
ঘর থেকে দেড় ভরি সোনা লুট করা হয়েছে। কাশীপাড়ার হরিদাস সূত্রধরের ঘর থেকে ৩ ভরির কিছু বেশি, শ্রীবাস সূত্রধরের ঘর থেকে ১ ভরি, নেপাল সূত্রধরের ঘর থেকে ১ ভরি, সুনীল সূত্রধরের ঘর থেকে ১ ভরি, শিব মোহন সূত্রধরের ঘর থেকে দেড় ভরি, মানিক দাসের ঘর থেকে দেড় ভরি, বল্টু দাসের ঘর থেকে ৮ আনা, প্রদীপ দাসের ঘর থেকে ১ ভরি, অমল দাসের ঘর থেকে ২ ভরি সোনা লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।
ঘোষপাড়ার মন্টু মালাকারের ঘর থেকে আধাভরি, রিপন মালাকারের ঘর থেকে দেড়ভরি, কৃষ্ণ দাসের ঘর থেকে ২ ভরি, নিরঞ্জন ঘোষের ঘর থেকে ১ ভরি ও বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ঘর থেকে ৮ ভরি সোনা লুট করে দুর্বৃত্তরা।
গাংকলপাড়ার শিবু দাসের ঘর থেকে ১ ভরি, মোহল লাল দাসের ঘর থেকে ১ ভরি সোনা লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া কাশীপাড়ার শিব মোহন সূত্রধরের ঘর থেকে ২ ভরি রুপা লুট করা হয়। নাসিরনগর সদরের সোনা-রুপা ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার মানুষ যে মানের সোনা ব্যবহার করেন তার মূল্য ভরি প্রতি ৪০ হাজার ও ভরিপ্রতি রুপার মূল্য ৬০০ টাকার বেশি নয়। সে হিসেবে লুটে নেওয়া সোনার মূল্য দাঁড়ায় ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও রুপার মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা।
মন্দির থেকে যত সোনা-রুপা লুটপাট : নাসিরনগর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সাগর শনিবার সকালে এই প্রতিবেদককে জানান, পশ্চিমপাড়ার লংগন নদীর তীরে অবস্থিত প্রায় দেড়শ বছরের পুুুরনো জগন্নাথ মন্দির থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের (২১ ভরির কিছু বেশি) গোপাল মূর্তি লুট করা হয়েছে। তবে মূর্তির সিংহাসনটি রয়েছে। মূর্তিটি আনুমানিক দেড়শ বছর ধরে এখানে ছিল বলে জানান এলাকাবাসী। কথিত আছে- এটি এখানে দান করেছিলেন উপজেলার পার্শ্ববর্তী সরাইল উপজেলার জমিদার দেওয়ান। বর্তমানে স্থানীয় বাজারের সর্বনিম্ন মূল্য অনুযায়ী এ মূর্তির দাম ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া মন্দির থেকেই জগন্নাথ, শুভদ্র ও বলদেব দেবতার মাথায় থাকা তিনটি রুপার মুকুট লুট করা হয়। এ তিনটির ওজন আনুমানিক ১০০ ভরি। বর্তমানে স্থানীয় বাজারের মূল্য অনুযায়ী এ ওজনের রুপার দাম ৬০ হাজার টাকা। নগদ ২০ হাজার টাকাও এখান থেকে লুট করা হয়েছে বলে জানান বিজয়।
গৌরমন্দির থেকে লুটে নেওয়া হয় আট ভরি সোনা বলে জানান মন্দির পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য নগেন দাস। লুটে নেওয়া সোনার মধ্যে দুটি মূর্তি ও দুটি চাঁদ ছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলায় ৮৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষয়-ক্ষতির দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছোট-বড়, ব্যক্তিগত-সার্বজনীন ১৪টি মন্দির ও ৫৮টি বসতবাড়ি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে এ ক্ষতির পরিমাণ জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা নিজ মুখে ক্ষতির পরিমাণ বর্ণনা করেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
বসতবাড়ি থেকে যত টাকা নগদ লুট : উপজেলার চারটি পাড়া-মহল্লার ২৭টি বাড়ি থেকে নগদ অর্থ লুটের পরিমাণ ৮ লাখ ৯২ হাজার ৩০০। এর মধ্যে ঘোষপাড়ার ছয়টি, কাশীপাড়ার ১৬টি, পূর্ব পাড়ার দুটি, গাংকলপাড়ার তিনটি বাড়ি রয়েছে।
আমাদের অর্থনীতির বের করা আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি আপনাদের তথ্যের সঙ্গে একমত। তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। নাসিরনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদও এ তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমরা এখনো চূড়ান্ত হিসাব করিনি, কাজ চলছে। তবে আপনাদের তথ্যের সঙ্গে একমত। খুব দ্রুত সরকারিভাবে সহযোগিতা করার কাজ অব্যহত আছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে জানা যায়, ঘোষপাড়ার গোপাল দাসের ঘর থেকে ২০ হাজার, মন্টু মালাকারের ঘর থেকে ৪০ হাজার, রিপন মালাকারের ঘর থেকে ৫০ হাজার, হরি মাধব মল্লিকের ঘর থেকে ২০ হাজার, নিরঞ্জন ঘোষের ঘর থেকে ৬০ হাজার ও বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ঘর থেকে দুই লাখ টাকা লুট করা হয়েছে।
কাশীপাড়ার হরিদাস সূত্রধরের ঘর থেকে ৫০ হাজার, জয় শংকর সূত্রধরের ঘর থেকে ৫০ হাজার, পালন সূত্রধরের ঘর থেকে ১১ হাজার, অতুল সূত্রধরের ঘর থেকে ৩০ হাজার, মালদা দাসের ঘর থেকে ২০ হাজার, নেপাল সূত্রধরের ঘর থেকে ২৫ হাজার, সুনীল সূত্রধরের ঘর থেকে ২২ হাজার, শিব মোহন সূত্রধরের ঘর থেকে ১৫ হাজার, মানিক দাসের ঘর থেকে ১৫ হাজার, বল্টু দাসের ঘর থেকে ১০ হাজার, প্রদীপ দাসের ঘর থেকে ২৫ হাজার, সুভাস চৌধুরীর ঘর থেকে ২০ হাজার, দীলিপ চৌধুরীর ঘর থেকে ৮১ হাজার, অমল দাসের ঘর থেকে ৫ হাজার, মতিলাল দাসের ঘর থেকে ১৫ হাজার ও বানুদাসের ঘর থেকে ৬ হাজার টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা। পূর্বপাড়ার সুশীল সরকারের ঘর থেকে ৫ হাজার, সজল সরকারের ঘর থেকে ৩৩ হাজার টাকা লুট করা হয়। গাংকলপাড়ার শিবু দাসের ঘর থেকে ৩৫ হাজার, কুমুদ দাসের ঘর থেকে ১৫ হাজার ও মোহন লাল দাসের ঘর থেকে ৩১ হাজার টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম