বাবার স্মৃতিচিহ্ন দেখে নির্বাক বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারে ব্যবহার করা আসবাবের সামনে এসেই থামলেন তার দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সংগ্রামের স্মৃতি ছুঁয়ে দেখলেন, অনুভব করলেন। আবেগ তাড়িত দুই বোন বাবার সংগ্রামী জীবনের কথা স্মরণ করে নির্বাক হলেন। পিন পতন নীরবতায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা টেবিল-চেয়ার, হাঁড়ি-পাতিল এবং তৈজসপত্রগুলো দেখতে দেখতেই বেদনায় নীল হলেন। চোখের কোণে জমে উঠলো বিষাদ আর কান্নার জল। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানা ও ভাগ্নে রাদওয়ান সিদ্দিকী ববিকে নিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমেই শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘরে যান। জাদুঘরের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। বাইরে বৃষ্টি আর বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের স্মৃতি মনে করে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার মধ্যেও চলছিলো এক অন্যরকম ঝড়। এসময় তিনি স্মৃতি জাদুঘরের বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি নির্দশন গ্যালারিতে যান। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে বন্দি হয়ে যে কক্ষটিতে ছিলেন সেখানেই দুই বোন যান এবং ঘুরে ঘুরে দেখেন সেখানে রাখা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ছবি। দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর ওই কক্ষটিতে অবস্থান করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী কক্ষটিতে রাখা বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, হাঁড়ি-পাতিলসহ আসবাবপত্রগুলো ধরে দেখেন। প্রত্যেকটি জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। এসময় তাদের মুখ ছিলো ভীষণ ভারাক্রান্ত, চোখ ছল ছল করছিলো।
সেখানে উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর কারা স্মৃতি জাদুঘর থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী কারাগারের বর্তমান নকশা দেখেন তিনি। তারপর তিনি জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে যান। প্রধানমন্ত্রী থমকে যান প্রবেশ মুখেই। যেখানে রয়েছে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত মরদেহ রাখার স্থানটি। জাদুঘর প্রাঙ্গণে থাকা জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সেই কক্ষে যান এবং কিছুক্ষণ অবস্থান করে বের হয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন। বিষণœœভাবেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার সংগ্রামী স্মৃতি বিজড়িত কারাগার পরিদর্শন শেষ করেন তিনি।
উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করার আগে প্রধানমন্ত্রী সরেজমিনে ঘুরে দেখতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যান। ১৭৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মিত হয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক ঘটনার সাক্ষি এই কারাগার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৮০ দিনের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এ কারাগারে। গত জুলাই মাসে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন এ কারাগারের ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী নকশাও প্রণয়ন হয়েছে। সম্পাদনা: দেলওয়ার হোসাইন