কারাগারের ঐতিহাসিক নিদর্শন দেওয়ানি সেল ও ফাঁসির মঞ্চ সংরক্ষণ
আজাদ হোসেন সুমন: পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের কনডেম সেলের পাশে অবস্থিত ফাঁসির মঞ্চটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। ২২৮ বছরের লাখো স্মৃতি বিজড়িত কারাগারের ভেতরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চ। যা এখনো বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে যেমন ফাঁসি হয়েছে হাজারো অপরাধীর। তেমনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হতে হয়েছে অনেককে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এখানে ফাঁসির মঞ্চে কতজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসেব না থাকলেও দেশের ঐতিহাসিক প্রায় সব ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এখানে।
আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে দেওয়ানী সেল-যেখানে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে রাখা হতো। সেটা ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী কারাগারের এখন কোলাহল নেই। নেই কোনো হাঁক ডাক। কারারক্ষী ব্যারাকগুলো অনেকটা শূন্য। আশপাশের ছোটখাটো দোকানীদের আয় কমে গেছে। কারাগারের ভেতরের দৃশ্য দেখার জন্য আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। আর সাধারণ মানুষের আগ্রহ মেটাতে আরও ২ দিন (১১ ও ১২ নভেম্বর ) উন্মুক্ত রাখা হবে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারটি। ১০০ টাকার বিনিময়ে তারা ঢুকতে পারছেন কারাগারে।
গত ৩ দিনে শত শত নারী, পুরুষ এ কারাগারের ভেতওে ঢোকার সুযোগ পেয়েছেন। ভেতরে স্থাপিত দুটি জাদুঘর পরিদর্শন করে তারা তৃপ্ত মন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। জেলহত্যা দিবসে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে চার দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ চারদিন সর্বসাধারণের জন্য কারাগার উন্মুক্ত করা হয়। ১ নভেম্বর বিকালে ‘সংগ্রামী জীবনগাঁথা’ শিরোনামে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতার স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা। কারাগারের ভেতর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কারা স্মৃতি জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর রয়েছে।
দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল কারাগারের ওই দুটি জাদুঘরকে ঘিরে। মূল ফটক পার হয়ে বামদিকে একটু এগুনোর পর ‘নীলনদ’ সেল (বিদেশি বন্দিদের রাখা হতো এখানে)। এর পাশেই জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর। মূল ফটকের সামনে একটি বেদী। হত্যার পর যেখানে রাখা হয়েছিল চার নেতার লাশ। একটু ভেতরে এগিয়ে গেলে চার নেতার আবক্ষ ভাস্কর্য। প্রত্যেক ভাস্কর্যের নিচে সংক্ষিপ্তাকারে লেখা তাদের রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের কিছু বিবরণ। পাশেই জাতীয় চার নেতার ‘মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতি কক্ষ’। সামনে দাঁড়ালে ডানদিকের কক্ষটি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ, দ্বিতীয়টি এএইচএম কামরুজ্জামান এবং এরপরের কক্ষ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নামে। প্রতিটি কক্ষেই কারাগারে থাকাকালীন সময়ে চার নেতার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। রয়েছে ঘাতকদের ছোড়া গুলির চিহ্ন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম