ঢাকা কারাগারে স্বাধীনতার পর ৪৩৩ জনের ফাঁসি কার্যকর মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে শুরু যুদ্ধাপরাধী দিয়ে শেষ
আজাদ হোসেন সুমন: স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনার পর এখন পর্যন্ত ৪৩৩ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে পুরান ঢাকার কারাগারে। মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের ফাঁসির মধ্যদিয়ে প্রথম রক্তঝরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে, যার যবনিকা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর হয় ১৯৭৬ সালে। মতিউর রহমান নিজামীর ২০১৬ সালে। এই কারাগার এখন পরিত্যক্ত। কেন্দ্রীয় কারাগার নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জে।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা কারাগারের ফাঁসির মঞ্চেই কার্যকর করা হয় ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫ আসামি সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, একেএম মহিউদ্দিনের। এছাড়া রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যার দায়ে ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ১২ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয় এই কারাগারে। ১৯৮২ সালে ৬ এবং ১৯৮৩ সালে ৭ জনের রায় কার্যকরও হয় এখানে। এরপর ১৯৮৫ সালে ১৩ জন, ১৯৮৬ সালে ২৬ জন ১৯৮৮ সালে ২ জন ও ১৯৯০ সালে ১ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। ১৯৯২ সালে ফাঁসি হয় ৫ জনের। ১৯৯৪ সালে কার্যকর হয় দু’জনের ফাঁসি। ১৯৯৭ সালে আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ দু’জনের ফাঁসি হয়। এরপর ২০০১ সালে ৩ এবং ২০০২ ও ২০০৩ সালে দু’জন করে ৪ জনের ফাঁসি হয়। ২০০৭ সালে স্ত্রী হত্যার দায়ে নারায়ণগঞ্জের রিপনের ফাঁসি হয় কেন্দ্রীয় কারাগারের এই মঞ্চে। পরকীয়ার জেরে স্ত্রী হত্যার দায়ে ডা. ইকবালের ফাঁসি, শারমিন রীমাকে হত্যার দায়ে স্বামী মনিরের ফাঁসিও কার্যকর হয় পুরানো এই ফাঁসির মঞ্চে।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামান এবং একই বছরের ২২ নভেম্বর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদেরও ফাঁসি কার্যকর হয় একই মঞ্চে। চলতি বছরের ১১মে জামায়াতের আমির মতিউর নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে প্রাচীন এ কারাগারটিতে শেষ ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এ ব্যাপারে কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ফাঁসির মঞ্চটি বহু ঘটনার সাক্ষি। এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক। ফলে ফাঁসির মঞ্চটিকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আদালত থেকে চূড়ান্ত রায়ের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশ কারাগারের পৌঁছানোর মধ্যদিয়ে ফাঁসি কার্যকরের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এরপর আসামি ৩ ঘণ্টা আগে ফাঁসির কথা জানানো হয় এবং পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের পর শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হয়। এরপর মৌলভী এসে তওবা পড়ানোর পর ৪জন কারারক্ষী এসে আসামিকে পেছনের দিক থেকে ২ হাত বেঁধে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রতীক্ষারত জল্লাদ যমটুপি পরিয়ে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেন। এরপর সময় হলে সিনিয়র জেল সুপার হাতে থাকা রুমাল ফেলে দিলে জল্লাদ কাঠের লিভার টান দেন এতে আসামির পায়ের নীচে থাকা কাঠের পাতাতন সরে যায়-এতে আসামির গলায় থাকা দড়িতে ফাঁস লেগে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মৃতদেহ নামিয়ে সিভিল সার্জন পায়ের রগ কেটে দিয়ে মৃত্যু শতভাগ নিশ্চিত করেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম