গত তিন বছরে ১ হাজার ৫৬ কে.জি অবৈধ সোনা উদ্ধার চাকরি হারানোর ভয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সোনার চালান ধরতে সাহস পায় না
বিপ্লব বিশ্বাস: ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন সোনা চোরাচালানের মূল হোতারা। দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আনা সোনার চালানের বাহক ধরা পড়লেও পার পেয়ে যাচ্ছেন নেপথ্যের মূল হোতারা। ২০১৩ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬ কেজি ৮শ ১৭ গ্রাম সোনা উদ্ধারের ঘটনায় ১৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই বাহক।
শুল্ক গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যমতে, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে এসব সোনা এদেশে এলেও মূলত তা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাচ্ছে পাশের দেশগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, বিমানবন্দর ও সীমান্তে দায়িত্বরত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ, সিভিল এ্যাভিয়েশনের কতিপয় সদস্য ও কিছু রাজনীতিবিদ সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, সেখানে আসা-যাওয়া ব্যক্তিদের মাত্র ৫ শতাংশ স্ক্যানিং করা হয়। কেবল সুনির্দিষ্ট তথ্য অথবা সন্দেহের ভিত্তিতে যাত্রীদের এই তল্লাশি করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যখন-তখন যে কোনো যাত্রীর দেহ তল্লাশির সুযোগ না থাকায় এমন পরিস্থিতি হয় বলে শুল্ক গোয়েন্দারা দাবি করেন। ফলে উদ্ধারের চেয়েও শতগুণ বেশি সোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা শুল্ক গোয়েন্দাদের। এছাড়া সোনা চোরাকারবারিদের হাত অনেক লম্বা হওয়ায় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা হয়রানি ও চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক সময় সোনার চালান ধরার সাহস পান না। এই সুযোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সোনার চোরাকারবারিদের শক্তিশালী নেটওর্য়াক গড়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, সোনার চোরাচালান আটকের পর অনেক সময় মূল হোতাদের শনাক্ত করা সম্ভব হলেও নানা কারণে তাদের নামে মামলা করার সাহস পায় না সংশ্লিষ্টরা। আবার যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তারাও খুব সহজেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।
সূত্র জানায়, দেশে ২৫ হাজারের মতো ছোট-বড় সোনার দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদের বৈধপথে (এলসি খুলে) কোনো সোনা আমদানির রেকর্ড নেই। প্রবাসীদের আনা সোনা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এছাড়া চোরাই সোনা আটকের পর মামলা নিষ্পত্তি হলে নিলাম থেকেও সোনা কিনে চোহিদা মেটানো হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফথরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, এখন অবৈধ পথে বা কালোবাজারির মাধ্যমে দেশে সোনা আসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে চোরাইপথে কিছু সোনা আনলেও সেগুলো গোয়েন্দাজালে ধরা পড়ছে। তবে কিছু সোনা হয়তো আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা আগের থেকে অনেকটাই তৎপর। সম্পাদিত:শারমিন আজাদ