বাংলাদেশ ব্যাংকে ড্যাস বোর্ড স্থাপন কঠিন হয়ে গেছে আমদানি-রপ্তানিতে মুদ্রা পাচার
জাফর আহমদ: তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ড্যাস বোর্ড স্থাপিত হওয়ার পর আমদানি-রপ্তানির পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। আমদানি-রপ্তানি করার জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলে টাকা পাঠিয়ে শান্তিতে বসে থাকতে পারছেন না কোনো ব্যবসায়ী। এলসি খোলার পর নির্দিষ্ট সময় পার করলেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার অনুসন্ধান শুরু করছে।
তথ্য অনুযায়ী, যে কোনো পণ্য আমদানি করার জন্য এলসি খোলার সময় সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেমে এন্ট্রি দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমদানি সম্পর্কিত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট তথ্য কোষে জমা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক কোন পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে সব দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। এলসি খোলার ক্ষেত্রে দিনের সব চিত্র একটি সংক্ষিপ্ত সার হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাতে সার্বক্ষণিক প্রদর্শিত হচ্ছে। ১২০ দিন পর ওই পণ্যমূল্য দেশে না এলে ওই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে। পাশাপাশি কোন পণ্যের নির্দিষ্ট দামের অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান (ওভার ইনভয়েজের মাধ্যমে) টাকা পাচার করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যবেক্ষণ করতে পারছে।
সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করার চেষ্টা করলে সে পণ্য আটকিয়ে দেওয়া হয়। পরে কন্টেইনার চেক করে দেখতে যায় রেজিনের নামে ওই আমদানিকারক সিমেন্ট আমদানি করছে। মধ্যপ্রাচ্য রেজিন রপ্তানিকারক দেশ নয়। অথচ সেখান থেকে রেজিন আমদানিকারক করা হচ্ছে-বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তদন্ত করে সেখানে সিমেন্ট পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাধীন আছে। এ পাচার রোধে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজও ভূমিকা পালন করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ড্যাস বোর্ড প্রতিষ্ঠার ফলে আমদানি রপ্তানি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়েছে। আগেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে আমদানি-রপ্তানির প্রতিবেদন দিতো। তবে তা ছিল কাগজে লিপিবদ্ধ করা প্রতিবেদন। তখন পুরো পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হতো। এখন অনলাইন সিস্টেমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাসবোর্ডেও প্রদর্শিত হচ্ছে। ফলে এখন পর্যবেক্ষণ সহজ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত না এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে।
রপ্তানির ক্ষেত্রে ড্যাসবোর্ড ভূমিকা পালন করছে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এখন তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর। প্রতিবছর ২৬ বিলিয়নের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ আছে তৈরি পোশাক খাতে আন্ডার ইনভয়েজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ড্যাস বোর্ড প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের আন্ডার ইনভয়েজ, ওভার ইনভয়েজ ও অপ্রত্যাবশিত আয় পর্যবেক্ষণ করছে। রপ্তানির করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি মূল্য ফিরে না এলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রপ্তানি করে রপ্তানি মুল্য ফেরত না এনে পাচার করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি একটি তৈরি পোশাক কারখানা আমেরিকায় পণ্য রপ্তানি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি মূল্য ফেরত না আনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি