ফেসবুকে বাংলাদেশ…
জনগণ নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই তাদের সাহস
আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ
যারা মুসলমান বা ইসলামের কথা বলে হিন্দু বা বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতন চালায়, তাদের জমি-সম্পদ দখল করে; যারা বাঙালির কথা বলে পাহাড় বা সমতলে অন্য জাতির ওপর নির্যাতন চালায়, পাহাড় জমি দখল করে; তারা কেউই সংখ্যাগুরু মুসলমান বা সংখ্যাগুরু বাঙালির প্রতিনিধি নয়। জনগণ নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই তাদের সাহস। এসব আক্রমণ বা দখলকে সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর আক্রমণ হিসেবে দেখা আমাদের জন্য আত্মঘাতী, আক্রমণকারীরা ঘটনা সেভাবেই দেখাতে চায়। আসলে এই নিপীড়ক দখলদার লুটেরারাই সংখ্যালঘু; তারা কখনো ধর্মের কথা বলে হিন্দু-বৌদ্ধদের সম্পদ দখল করে, কখনো জাতির কথা বলে অন্য জাতি ও ভাষার মানুষের সম্পদ দখল করে। সমাজের ভিতর পুষে রাখা এবং উস্কানি দেওয়া সাম্প্রদায়িক বা জাতিবিদ্বেষী বিষ এদের কাজে লাগে। এতে সাধারণ মানুষও নিজের শত্রুদের হাতিয়ার হয়।
আবার এই লুটেরা গোষ্ঠীই দখল করে নদী-খাল-বিল-জমি, নির্যাতন চালায় মানুষের ওপর, বাঙালি ও মুসলমান বলে নারী-পুরুষ কেউ এদের হাত থেকে পার পায় না। এরাই উন্নয়নের কথা বলে সর্বজনের সম্পদ আশ্রয় সুন্দরবনসহ বন ও নদীবিনাশ করে মুনাফার পাহাড় লোটে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই তাই বহুদিক থেকে অভিন্ন, এর ঐক্যসূত্র ধরতে না পারলে এদের মোকাবিলা কখনো সম্ভব হবে না। এদের কৌশলে বিভ্রান্ত বা পরাস্ত হয়ে সর্বজনের লড়াই কখনো খ- খ- হয়ে বা কখনো পরস্পরের বিরুদ্ধে গিয়ে এই বর্বরদের অট্টহাসির কারণ হয়। বারবার অপমানে, নির্যাতনে, সম্পদহানিতে, নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের ছিন্নভিন্ন হতে হয়।
সরকারের নির্বিকারত্ব বিস্ময়কর
গোলাম মোর্তোজা, সম্পাদক, সাপ্তাহিক
শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, দেশের আরও কিছু অঞ্চলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির-প্রতিমা ভাঙা চলছে। নাসিরনগর আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর কারণে বেশি আলোচিত। সরকারের নির্বিকারত্ব বিস্ময়কর। আশঙ্কা এই প্রেক্ষিতেই, রামপাল বিরোধী আন্দোলনকারীদের এদিকে ব্যস্ত রেখে, দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নয় তো? অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হলেও, আশঙ্কাটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছি না।
এই তালিকা দেখে কি আমাদের তারকা ধনকুবেরেরা লজ্জা পাবেন?
প্রভাষ আমিন, অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
অনলাইনে, অফলাইনে, টিভিতে, পত্রিকায় অনেক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ধনকুবেরের নাম পড়ি, চেহারা দেখি। কাউছ মিয়া নামের কারও নামই শুনিনি, চেহারা দেখা তো দূরের কথা। পত্রিকায় পড়লাম, হাকিমপুরী জর্দার মালিক কাউছ মিয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টাকা ট্যাক্স দিয়েছেন। এনবিআর ঘোষিত টপ টেনের মাত্র দুজনকে আমি চিনি। সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর আছেন ১০ নম্বরে। নয় নম্বরে থাকা সার ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খানকেও আমি চিনতাম না, যদি কদিন আগে তিনি বাফুফের সভাপতি পদে নির্বাচন করতেন। এই তালিকা দেখে কি আমাদের তারকা ধনকুবেরেরা লজ্জা পাবেন? স্যালুট কাউছ মিয়া।
এই দল নাকি অসাম্প্রদায়িক
ডা. ইমরান এইচ সরকার, মুখপাত্র, গণজাগরণ মঞ্চ
নাসিরনগরের আক্রান্ত হিন্দু জনগোষ্ঠী শাসক দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই অংশের ক্ষমতার লড়াইয়ের শিকার হয়েছেন এটি পরিষ্কার। এই নৃশংস সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পরিকল্পনা, হামলা করা ও হামলার পর মূল অপরাধীদের আড়াল করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সবরকম চেষ্টাই করেছে তারা। সেখানকার জনপ্রতিনিধি আক্রান্ত মানুষদের রক্ষার কোনো চেষ্টা করেনি, বরং পালিয়ে যেতে বলেছিল। পালিয়ে যেতে বলার কারণ সম্ভবত এরা চলে গেলে যাতে ফেলে যাওয়া সম্পত্তির দখল নিতে পারে। দায়িত্বপালনে চূড়ান্ত ব্যর্থতা আর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণের পরও বহাল তবিয়তে আছে নাসিরনগরের ইউএনও। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলা সন্ত্রাসী ছায়েদুলের মন্ত্রীত্ব এখনও যায়নি! কাজেই হিন্দু নির্যাতন ও বিতাড়নে সরকার যে ঢালাও মদদ দিচ্ছে, সেটি বুঝতে খুব বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন নেই। এক অংশ টেবিলে বসে ছক আঁকছে, আরেক অংশ সেটি বাস্তবায়ন করছে। অথচ এই শাসক দল নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, এই দল নাকি অসাম্প্রদায়িক।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই পক্ষই স্বীকার করে নিয়েছে রসরাজ নির্দোষ, তারপরও হয়তো রসরাজকে নিয়ে আরেকটি জজ মিয়া নাটক তৈরির চেষ্টা চলবে। আমি কেবল স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠীরও পতন হয়েছিল। যে যতবড় নিপীড়ক ছিল, তার পতন হয়েছে তত ভয়াবহ। ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। জনতার আদালতে চিরকালই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।