বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধ হচ্ছে জরিমানা দিতে হচ্ছে না রুপালী জনতা ও কৃষি ব্যাংককে
জাফর আহমদ: স্থানীয় ও বিদেশি বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন বাণিজ্যিক রুপালী, জনতা ও কৃষি ব্যাংক। বিষয়টি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরআগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিল পরিশোধের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিল তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর ফলে তিন ব্যাংককে জরিমানা দিতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত জুন ভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী তিন ব্যাংকের মোট বকেয়া বিল রয়েছে ৮২টি। এসব বিলের বিপরীতে রপ্তানিকারকদের পাওনা রয়েছে ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১ কোটি টাকা। এরমধ্যে আলোচ্য সময়ে রুপালী ব্যাংকের বকেয়া বিল রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে আবার ২২টি স্থানীয় ও ৩টি বিদেশি বিল। এ ২৫টি বিলের বিপরীতে গ্রাহকের পাওনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। জুন ভিত্তিক প্রতিবেদন অনুসারে জনতা ব্যাংকের বকেয়া বিল রয়েছে ২৩টি। এসব বিলের বিপরীতে গ্রাহকের পাওনা রয়েছে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বকেয়া বিলের পরিমাণ রয়েছে ৩৪টি। এরমধ্যে ৩৪টি বিলই স্থানীয় আমদানিকারকদের। আর এর বিপরীতে গ্রাহকের পাওনা রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে বকেয়া বিলের কারণে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৮টি ব্যাংককে শোকজ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫টি ব্যাংক বকেয়া বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছিল। বাকি তিনটি ব্যাংক অর্থাৎ জনতা, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক বকেয়া পরিশোধ না করায় তিনটি ব্যাংককে বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য কঠোর অবস্থান নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব বিল পরিশোধ না করায় অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। গত ২৬ অক্টোবর এক সপ্তাহের সময় দিয়ে তিন বাণিজ্যিক ব্যাংককে আল্টিমেটাম দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বলা হয় ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে এক লক্ষ টাক্ াকরে জরিমানা করা হবে। এ পরপরই তিন ব্যাংকে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেয়। এর পরপরই তিন বাণিজ্যিক ব্যাংককে যাতে জরিমানা না দিতে হয়-এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমদানিকারকরা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষেও দেনা পরিশোধের গ্যারান্টি হয় নিজ নিজ দেশের ব্যাংক। পণ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে মূল্য কত দিনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে তা উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়, যাকে আমদানি ঋণপত্র বলে। রপ্তানিকারক চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করলে আমদানিকারকের ব্যাংক শর্ত অনুযায়ী রপ্তানিকারক ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পণ্য সরবরাহ করা হলেও রপ্তানিকারককে টাকা পরিশোধ করেন না আমদানিকারক। এ ক্ষেত্রে ইমেজ সঙ্কটে পড়ে দেশ ও দেশের ব্যাংকগুলো। এর পরিণাম দেশকেই বহন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি আমদানি বিল পরিশোধ করেনি ব্যাংকগুলো। এ কারণে জনতা, রুপালী কৃষি ব্যাংককে আল্টিমেটাম দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু