গৃহকর্মীকে নির্যাতন মামলা খালাস পেয়েছেন ক্রিকেটার সাহাদাত দম্পতি
মামুন খান ও সাবিহা সুলতানা: ক্রিকেটার সাহাদাত হোসেন এবং তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যকে গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলা থেকে বেকসুর খালাসের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকার পাঁচ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজীনা ইসমাইল তাদের খালাসের আদেশ দেন। বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, ট্রাইব্যুনালে দেওয়া ৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যের আলোকে আসামি সাহাদাত হোসেন এবং জেসমিন জাহানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা মামলার ঘটনা প্রমাণিত হয় নাই। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় আসামি কাজী সাহাদাত হোসেন এবং নিত্য সাহাদাত অত্র মামলায় কোনো শাস্তি পেতে পারে না। এজন্য আদালত তাদের খালাস প্রদান করছে। রায় ঘোষণাকালে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন সাহাদাত এবং তার স্ত্রী। রায় ঘোষণার পর সাহাদাত বলেন, তিনি নির্দোষ। আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। শিগগিরই ক্রিকেটে ফেরার আশা করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি আর কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
সাহাদাতের আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, মামলাটিতে ৭ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জেরা জবানবন্দি পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। এই রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানী মানবাধিকার সংস্থার পক্ষে সৈয়দ নাজমুল হুদা বলেন, এই রায় প্রহসনের রায়। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য যাব। তবে এখানে রাষ্ট্রপক্ষের অনেকটা গাফিলতি ছিল। তাদের পক্ষ থেকে কোনো রকমের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে সাংবাদিকের এক পশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষে ওই ট্রাইব্যুনালের পিপি আলী আসগর স্বপন বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি কি না সেটা আদেশে রায়ের পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আপিল করব কি করব না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল দশটার কিছু পরে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন সাহাদাত এবং তার স্ত্রী। এ সময় তাদের বিচলিত মনে হয়নি। অনেকটাই হাসিমাখা মুখে ছিলেন তারা। অনেক উৎসুক লোকজন তাদের দেখতে ট্রাইব্যুনালে একটু উঁকি মারেন। তবে এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না মামলার বাদী ও ভিকটিম। বাদী সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হকের মা অসুস্থ হওয়ায় তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানান রাজধানী মানবাধিকার সংস্থার পক্ষে সৈয়দ নাজমুল হুদা।
গত ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য রোববার দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৭ অক্টোবর সাহাদাত ও তার স্ত্রী নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আত্মপক্ষ শুনানি করেন। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(২) খ ধারায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুর রহমান চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পল্লবীর সাংবাদিক কলোনির ৩ নম্বর সড়কের মাথায় সাহাদাতের বাড়ির গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে (১১) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে সাহাদাতের বিরুদ্ধে ওই রাতেই মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর হ্যাপি আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেয়। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম