জমা হবে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজাভে রিজার্ভ চুরির ১৫.২৫ মিলিয়ন ডলার আগামী সপ্তাহে পাচ্ছে বাংলাদেশ
হাসান আরিফ ও শারমিন আজাদ: রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাউন্টে এই অর্থ জমা হবে। এর মাধ্যমে চুরি যাওয়া অর্থের একাংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এই প্রতিবেদককে বলেন, ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট তাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষিত ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার ও ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ফিলিপাইন পেসো বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করার আদেশ জারি করার পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়েছে। এখন তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনাপত্তি পত্র দেওয়ার পর নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে জমা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই টাকার নিয়ন্ত্রণ পাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ের চ’ড়ান্ত আলোচনার সময় এক ডলারের বিপরীতে ফিলিপাইন ৪৬ দশমিক ৪ পেসো ছিল। বর্তমানে তা ৪৮ পেসো হয়েছে। ফলে অর্থের মান ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার থাকবে না। এর কম-বেশি হতে পারে। উভয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি অনুযায়ী যেদিন অর্থ হস্তান্তর হবে সেই দিনের বাজার দরেই ডলার জমা হবে।
এ বিষয়ে দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার কম মনে হতে পারে। তবে এর মূল তাৎপর্য হচ্ছে চুরি হওয়া অর্থের দাবিদার বাংলাদেশ এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন অবশিষ্ট অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ সুগম হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেছেন, টাকা উদ্ধারের কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। আদালতে ডিক্রি করেছে যাতে ওই টাকা আর কেউ দাবি করতে না পারে। ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। এই হিসেবে রায়ের দুই মাসের মধ্যেই চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে চুরি হওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের বড় অংশই অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ডলারের এখনো কোনো হদিস মিলেনি। আরও প্রায় দেড় কোটি ডলারের ফিলিপাইনের জুয়ার কারবারে রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও সে বিষয়েও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। এ পরিস্থিতিতে রিজার্ভ চুরির বড় একটি অংশই ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট আদেশ দেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এফএম মোকাম্মেল হক বলেছিলেন, ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট শুনানি শেষে ইতোপূর্বে বাজেয়াপ্তকৃত ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষিত ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার ও ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ফিলিপাইন পেসো বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করার আদেশ জারি করেছেন। ফিলিপাইন সরকার বনাম কিম ওয়ংয়ের মামলায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে।
তিনি আরও বলেন, অবশিষ্ট অর্থ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যায় খুব শিগগির চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
গত মে মাসে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটির তদন্তের সময় ‘ক্যাসিনো জাংকেট’ কিম ওয়ং দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। যদিও তার জুয়ার আখড়ায় বাংলাদেশের রিজার্ভের সাড়ে তিন কোটি ডলার গিয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ফিলিপাইনের সরকার জুয়ার আখড়ার আরও আড়াই কোটি ডলার জব্ধ করেছে, ওই অর্থের দাবি বাংলাদেশ করলেও তার সুরাহা এখনও হয়নি। এছাড়া বাকি অর্থ কোথায় আছে তার কোনো হদিস এখনও মিলেনি।