নূসরাত জাহান: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বর্তমানে ৭ দিনের চীন সফরে রয়েছেন। রাজাকের এ সফরের তাৎপর্য হচ্ছেÑ যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীনের দিকে ঝুঁকছে মালয়েশিয়া। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী নীতি আরও একটু খর্ব হতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র খানিকটা বেকায়দায় পড়তে পারে বলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ফিলিপাইন কিছুদিন আগেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় খানিকটা চিন্তিত ওয়াশিংটন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুয়ার্তে। তবে দুয়ার্তে চীন সফর থেকে দেশে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মন্তব্য থেকে পিছু হটে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন কৌশলগতভাবে মার্কিনিদের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে তা বুঝতে অসুবিধে নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ প্রধানমন্ত্রী রাজাকও কি একই পথে এগোচ্ছেন? এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ১৪টি চুক্তি সই হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজনীতির বিশ্লেষক ব্রিজেট ওয়েলস বলেছেন, মালয়েশিয়ারও চীনের প্রতি আগ্রহ প্রমাণ করলÑ এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমছে। নাজিব চীনের শীর্ষ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। ফলে বোঝা যাচ্ছে তার এ সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মালয়েশিয়ার চীনের প্রতি এ আগ্রহ অবাক করার মতো কিছু নয়। ১৯৭৪ সালে রাজাকের বাবা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আব্দুল রাজাকের নেতৃত্বেই প্রথম বেইজিং এবং কুয়ালালামপুরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০৯ সালে রাজাক যখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে কিছুদিন পরে রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার বাণিজ্যগত সম্পর্ক বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কুয়ালালামপুর এবং বেইজিংয়ের মধ্যে সখ্য আরও দৃঢ় হয়।
বিশ্লেষক ব্রিজেটের মতে, ভূ-কৌশলগত কারণের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার এখন অর্থনৈতিকভাবেও সাহায্য প্রয়োজন। এই মুহূর্তে সেই সাহায্য চীনের থেকে ভালোভাবে আর কেউ করতে পারবে না। তাই তো চীনের প্রতি তারা বেশি আগ্রহী। অবকাঠামোগতভাবে চীনেও মালয়েশিয়ার অনেক প্রকল্প তৈরি করার প্রস্তাব পেয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে এই দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এসব সাহায্যের বিনিময়ে মালয়েশিয়া দক্ষিণ চীন সাগর বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে রেখে চীনের পাশে দাঁড়াবে কি নাÑ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। সূত্র: সিএনএন। এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী