ফারুক আলম, বাংলাবান্ধা থেকে ফিরে: বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন পয়েন্ট চালুর পর থেকে প্রতিদিন ভারতের শতাধিক ট্রাক প্রায় ২০ থেকে ৩০ মে. টন এলসি পাথর নিয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইয়ার্ডে প্রবেশ করত। এতে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার উপরে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় হত। কিন্তু গত একমাস ধরে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। সূত্র জানিয়েছে, বন্দর চালু করতে পাথর ব্যবসায়ী ও কাস্টমসদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে এলসি পাথর আমদানি হলে পাথর সটিং, নেটিং, ক্রাসিং, লোড-আনলোডিং ইত্যাদি কাজে কমপক্ষে ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করছিল। বন্দরের ব্যবসা ক্ষেত্রে জনসমাগম দেখা যেতো। বর্তমানে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যস্ততম স্থলবন্দরটি যেন জনশূণ্য। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কয়েক হাজার পাথর শ্রমিকের জীবন-জীবিকা রীতিমত থমকে গেছে।
কিছু অসাধু চক্রের কারণেই পাথরের দাম বেড়েছে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন এ কথা জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশে পাথর আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই। আগে যে পাথর ৯ ডলারে কিনেছি তা এখন ১৮ ডলারে কিনতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমি নিজেও ১১ টন পাথর কিনে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান করেছি।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মেহেদি হাসান খান বাবলা বলেন, আমরা ৯ ডলারে পাথর আমদানি করি সরকার তা ১০ ডলার রেট ধরে। কিন্তু হঠাৎ মধ্যভোগী চক্রের কারণে ভারতে পাথরের দাম বাড়ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। এজন্য বোর্ডের সিদ্ধান্তে আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি।
বাংলাবান্ধা এক কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, বন্দরে শুধু পাথর আমদানি নয়, সব পণ্য সামগ্রী আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের দাবি এই বন্দর দিয়ে শুধু পাথর আমদানি করলে চলবে না সকল ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হবে।
তিনি বলেন, ভারতের কাস্টম ক্ষোভ জানিয়ে বলেছে- বুড়িমারী, হিলি ও বেনপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। তাহলে বাংলাবান্ধা বন্দর দিয়ে কেন সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হবে না? বাংলাদেশ শুধু পাথর নিলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। পাথরসহ ভারতের অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশকে আমদানি করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা শুধু পাথর নেয় অন্যকোনো পণ্য নেয় না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ফুলবাড়িতে এক জনসভায় যাবার আগে রাস্তায় ব্যাপক যানজট ও ট্রাকে লোডিং ক্যাপাসিটির উপরে এলসি পাথর রপ্তানির বিষয়টি জানতে পারে। প্রতি ট্রাকের লোডিং ক্ষমতার অতিরিক্ত পাথর বহন ও রয়ালিটি ফাঁকির অভিযোগে পাথর রপ্তানির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ