হিলারি ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি
ড. দেলোয়ার হোসেন
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত হিলারি ক্লিনটনেরই বেশি। কারণ এখনো তিনি কিছুটা এগিয়ে আছেন। হিলারির সঙ্গে ট্রাম্পের যে ব্যবধান এতদিন ছিল তা অনেকাংশেই কমে এসেছে। প্রতিদিনই তার প্রভাব পড়ছে। ফলে এখনই সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। কারণ নির্বাচনের দিনটি যে কারোরই হতে পারে। তবে এটা বলা একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের নির্বাচন দেখতে পাবে বিশ্ব। এখানে যে কেউই নির্বাচিত হতে পারে। কারণ গত নির্বাচনে মিট রমনির সঙ্গে ওবামার এ রকম জনমত জরিপে প্রায় ফিফটি-ফিফটি অবস্থান ছিল। সেখান থেকে ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ট্রাম্পের জনমত জরিপ ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। কমাটা হচ্ছে, একজন জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থেকেও ভোট কমছে, অন্যদিকে যার ভোট কম ছিল তার বাড়ছে। এটা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা বোঝা মুশকিল। সবাই মনে করছেন, আফ্রিকান বা ল্যাটিন কিংবা এ ধরনের যে মাইনরিটি গ্রুপ রয়েছে তারা যদি ভোট দিতে যায় তাহলে হিলারি ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এই নির্বাচন নানা কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডেমোক্রেটরা আট বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাব, সেখানে সাধারণত দুই মেয়াদের পর একটা রাজনৈতিক পালাবদল হয়। সেই পালাবদলের একটা সম্ভাবনা থাকার কারণেই এই নির্বাচন যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই নির্বাচনে ট্রাম্পের যে নির্বাচনি কৌশল কিংবা তার যে ব্যক্তিত্ব, তিনি যে ধরনের আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করেন, তিনি অনেক নোংরা কৌশল অবলম্বন করেছেন, প্রয়োগও করেছেন। যার ফলে নির্বাচনের গুরুত্ব বেড়ে গেছে অনেকগুণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যাপারে মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে তার সম্পর্কে এত আপত্তি, তার আচরণ, তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে সাধারণত পলিসির উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু এবার অনেকটা ব্যক্তিত্ব নির্ভর প্রচারণা হয়েছে। যেখানে হিলারি ক্লিনটনও অনেক পিছিয়ে আছেন। তার ই-মেইল স্ক্যান্ডাল নিয়ে মার্কিন জনগণের আপত্তি রয়েছে। তারপরও সে প্রার্থী। আবার ট্রাম্পের বর্ণবাদী চিন্তা, নারী বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার প্রতিপক্ষকে যে ধরনের আক্রমণ করেছেন, এখানে পলিসির চেয়ে ব্যক্তিত্ব গুরুত্ব পাচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তথা বিশ্বরাজনীতিতে নতুন একটা মেরুকরণ বা নতুন একটা বাস্তবতার মধ্যে ঢুকে গেছে। সেখানে মার্কিন নেতৃত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়া, প্রার্থীতার পক্ষে ট্রাম্প নিজে এবং তার অন্য সহযোগী যারা রয়েছে তারা যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছে, সে কারণেই তার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণত মার্কিন নির্বাচনের গুরুত্ব বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি রাষ্ট্র হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ব্যাপক ক্ষমতাÑ সব মিলিয়েই সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনেক গুরুত্ব পায়, সারাবিশ্বে তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়।
হিলারি ক্লিনটনও পুরোপুরি ফ্রেশ নয়। তিনি হয়তো ট্রাম্পের চেয়ে ভালো, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ বা স্ক্যান্ডাল রয়েছে একজন প্রার্থীর আমরা কিন্তু তা দেখি না। গত চল্লিশ বছরের মার্কিন নির্বাচন যদি দেখি, যারা এমন বিতর্কিত ছিলেন বা যাদের বিরুদ্ধে এরকম বিতর্ক ছিল তারা শেষ পর্যন্ত প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখানে দুজনই বিতর্কিত। একজন তো ভয়ঙ্কর বিতর্কিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যে ভ্যালু বা সিস্টেম আছে তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করছেন, সেই ব্যক্তিও জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। যার কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয় সেই হিলারি ক্লিনটনও ই-মেইল স্ক্যান্ডালে অভিযুক্ত।
পরিচিতি: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান