রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন ডায়মন্ড
ইমরুল শাহেদ: নয় বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড এবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ছবি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি চিত্রনাট্য লেখার কাজও শেষ করেছেন এবং কলকাতার সমদর্শী দত্ত ও শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়কে চুক্তিবদ্ধও করেছেন।
কথা প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে জানালেন, রোহিঙ্গা নিয়ে ছবিটির জন্য তিনি থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্ত, চট্টগ্রাম, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরকে লোকেশন হিসেবে ব্যবহার করবেন। প্রচ- পরিশ্রম করতে হবে তাকে এ ছবিটি নির্মাণের জন্য- এ কথাটি বলতেও তিনি ভুল করেননি। এর আগে ডায়মন্ড ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে অন্তর্দান, সাঁওতাল বিদ্রোহে নেতৃত্বদানকারী ইলা মিত্রের জীবন অবলম্বনে নাচোলের রাণী ও গঙ্গাযাত্রা নির্মাণ করেছেন। অন্তর্দান ছবিটির জন্য ভারতীয় গণমাধ্যমসহ দেশিয় বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি। অন্তর্দান ও গঙ্গাযাত্রা ছবিতে তার বড় মেয়ে সাবরিনাও অভিনয় করেছেন। তিনিও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ডায়মন্ড বর্তমানে শেষ করেছেন শেষ কথা নামে একটি ছবি। এ ছবিটি প্রেম-বিরহের হলেও চিত্রনাট্যের বুনোটে স্থান পেয়েছে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যগাঁথা। আগামী এপ্রিল থেকে শুটিং শুরু করবেন রোহিঙ্গা ছবিটির।
তিনি বলেন, ‘আমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করি। রোহিঙ্গা শুধু একটি সংকটের নাম নয়। এটা এখন একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুও। এই সংকট নিয়ে জাতিসংঘও মাথা ঘামাচ্ছে।’ রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্যাতন, সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ অর্থাৎ যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তার চিত্র তুলে ধরা হবে তার ছবিটিতে। আজকে তারা ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, এমনকি বাংলাদেশেও। তারও একটা মোটামুটি চিত্র থাকবে ছবিটিতে।’ তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একদিকে সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আরেক দিকে মিয়ানমারকে সহায়তাও করছেন। অং সান সুচি শান্তিতে নোবেল পেলেও তার আমলেই রাখাইন প্রদেশে অশান্তির আগুন জ্বলছে, তিনি দিব্যি সেটা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এর সবই থাকবে আমার ছবিতে।’
তিনি বলেন, ‘ছবি শুরুই হবে অং সান সুচির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে।’ তিনি ‘রোহিঙ্গা সংকটের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করব’ বলেন ডায়মন্ড। রোহিঙ্গা কারা ? রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উদ্ভব সম্পর্কে নানা মতবাদ সত্ত্বেও নির্ভরযোগ্য মতবাদ হচ্ছে, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকান রাজ্যে বসতিস্থাপনকারী চট্টগ্রামী পিতার ঔরসজাত ও আরাকানী মায়ের গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীকে রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গা বলা হয়। এই জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ১৯৪০ সাল থেকে আরাকান রাজ্যের বৌদ্ধ, মগদের দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান আরাকান ত্যাগ করে। ১৯৪৮ সালে উ নুর শাসনামলে ৯০ ভাগ মগদের সমন্বয়ে গঠিত বার্মা টেরিটোরিয়াল ফোর্স (বিটিএফ) সন্দেহজনক নাগরিক অজুহাতে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ক্ষমতার পালাবদলে জেনারেল নেউইন ও স মং-এর শাসনামলে রোহিঙ্গাদের উপর আগের চাইতেও নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। নেউইনের আমলে আরাকানে জাতিগত আন্দোলন দমনের নামে নাগামিন ড্রাগন অপারেশন চালায়। আরাকান ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পৃক্ততার কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। নেউইন ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ১৯৮৩ সালের পর বার্মায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসমান নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে। পক্ষান্তরে ১৯৯০ সালের মে মাসে সাধারণ নির্বাচনে অং সান সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি আরাকানে ৯০ ভাগ আসনে জয় লাভ করে। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় ২৩টি নির্বাচনি এলাকায় একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে সুচির দল। তারপরও স মং ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সুচিকে গৃহবন্দী করে এবং রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান নতুনভাবে শুরু হয়। তা আজো অব্যাহত আছে। এমনকি সুচি ক্ষমতায় আসার পরও তা থামেনি।
অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেন, তার ছবিটি রোহিঙ্গাদের তথ্যচিত্র নয়। তবুও তিনি চেষ্টা করছেন একটি সুনির্দিষ্ট গল্পের মাধ্যমে তাদের ইতিহাসের প্রতি আলোকপাত করতে। সম্পাদনা : হাসান আরিফ