এস এম নূর মোহাম্মদ: দীর্ঘ প্রায় দেড়যুগ ধরে বিনাবিচারে আটক থাকার পর মো. শিপন নামের এক ব্যক্তিকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এ সংক্রান্ত রুল শুনানির পর গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ এ জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে জামিননামা দাখিলসহ শিপনকে সব ধরনের আইনগত সহায়তা দিতে ঢাকার লিগ্যাল এইড কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার বিচারিক আদালতকে (পরিবেশ আপিল আদালত) ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল শুনানির সময় আদালত বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও আদালত ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জাকর। তদন্ত কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) এর দায় এড়াতে পারে না। তেমনি বিচারকও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। একটি সভ্য দেশে এভাবে চলতে পারে না।
আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও পিপিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আইন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি। এটা ভালো লক্ষণ না। এছাড়া এ ঘটনা সবার নজরে আনার জন্য চ্যানেল-২৪ ও অন্যদের ধন্যবাদ জানান হাইকোর্ট।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এ একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদনের অনুলিখন ও সিডি গত ৩০ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে। এতে ওইদিন এক আদেশে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় ওই মামলার নথি তলব করেন। একইসঙ্গে ওই মামলায় ১৬ বছর ধরে কারাগারে থাকা আসামি শিপনকে ৮ নভেম্বর হাইকোর্টে হাজির করতে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি ওই আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
আদালতের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ শিপনকে হাইকোর্টে হাজির করে। এর আগেই ঢাকার আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্ট পাঠানো হয়। এ অবস্থায় গতকাল শুনানি শেষে জামিন দেন আদালত।
আদালত বলেন, মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মামলার প্রধান আসামি আমির হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য পিপি ২০১০ সালের ১৪ জুন আদালতে আবেদন করেন। যদিও আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি নথিতে রেখেছেন। এ অবস্থায় বিষয়টি আমাদের সামনে এসেছে। নথি থেকে দেখা যায়, পিপি বার বার সময় নিয়েছেন। এতে বিচার বিলম্বিত হয়েছে।
আদালত এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হকের কাছে জানতে চান, এ ব্যর্থতার দায় কার? জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক বলেন, এটা দায়িত্বহীনতা। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম