নাসিরনগরে সর্বদলীয় সুধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আমরা জজ মিয়া নাটক করি না’
রিকু আমির ও তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আমরা জজ মিয়া নাটক করি নাÑ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নাসিরনগরের ঘটনার প্রকৃত অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার, তা তা করা হবে। গতকাল নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা পুলিশ আয়োজিত সর্বদলীয় সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাড. ছায়েদুল হক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৯১ দিন আগুন সন্ত্রাস, দেশের বিভিন্নস্থানে ধর্মগুরু হত্যা, বিদেশি হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যারা ব্যর্থ হয়েছে, তারাই রামু, বান্দরবান, হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়েছে। তাতেও তারা ব্যর্থ হয়ে নাসিরনগরের মতো ঘটনা দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটিয়ে চলছে। কোনোভাবেই তারা দেশের শান্তি দেখতে চায় না। তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু সেটা কিছুতেই করতে দেওয়া হবে না।
নাসিরনগরের ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শনাক্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীরা পালাতে পারবে না। এখানে হামলাকারীদের এলাকাবাসী চেনেন না। কিন্তু গোয়েন্দারা তাদের বের করবেই।
তিনি বলেন, প্রশাসন ঠিক না থাকলে আমরা যতই অর্জন করি, উন্নয়ন করি না কেন, সব নস্যাৎ হয়ে যাবে। এজন্য প্রশাসনকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। কোনো ঘটনাকে খাটো করে দেখা হয় না।
নাসিরনগর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুনেছি সেদিন এখানে মুসলমানরা হিন্দুদের জানমাল রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল। এতে এটাই প্রমাণ হয়, এ অঞ্চল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর দেশকে আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে দেব না, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা যাবে না। যেভাবে ব্লগারদের অবমাননাকর লেখা দমন করা হয়েছে, সেভাবে অন্য অবমাননাকারীদেরও দমন করা হবে। আমাদের সম্মিলিত শক্তিতে সন্ত্রাস গুটাচ্ছে, মানবতার জয় হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেনÑ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, নাসিরনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম প্রমুখ।
বীরেন শিকদার বলেন, নাসিরনগরে হামলার মাধ্যমে আমাদের সমাজ কাঠামোতে আঘাত করা হয়েছে। তার প্রশ্নÑ নাসিরনগর সদর থেকে দূরবর্তী গ্রাম হরিনবেড়ে ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটল অথচ সেখানে কিছু না হয়ে নাসিরনগর সদরে কেন হলো?
সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, কোনো গুজবে কান দেবেন না। অশান্তি সৃষ্টিকারী চক্রকে সবাই মিলে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, সবই আমরা বের করেছি, কে, কারা, কোন উদ্দেশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। দ্রুত তাদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। দুষ্কৃতকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে, তারা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন। ট্রাকে করে কারা লোক পাঠিয়ছে, কারা ছবি প্রিন্ট করে বিতরণ করেছে, লাখ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, আমরা জানি।
জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করে কাউকে ফায়দা লুটতে দেয়া হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার অভিযোগ করেন, নাসিরনগরের বিএনপি নেতা আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। ট্রাক, মোটরসাইকেলে করে লোকজন আনা হয় মাধবপুর থেকে। রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। হান্নান ও মাধবপুর জামায়াতের নেতৃত্বে জঙ্গি মিছিলও করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি, র্যাবের ডিআইজি গতকাল দুপুরে নাসিরনগরে আসেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত গৌর মন্দির পরিদর্শন করেন। এরপর যান সমাবেশে। নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারো মানুষ সমাবেশে অংশ নেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী