দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগী দাউদ মার্চেন্ট ভারতে!
আজাদ হোসেন সুমন: ভারতীয় সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব গুলশান কুমার হত্যামামলার আসামি বহুল আলোচিত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ আব্দুর রউফ দাউদ মার্চেন্টকে সীমান্ত পথে পুশব্যাক করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে দাউদ মার্চেন্টকে নিয়ে এ পুশব্যাক করে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।
কারা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কোনো সংস্থাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আগের অবস্থানেই আছেন। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, পুশব্যাক-ট্যাক নয়, দাউদ মার্চেন্ট জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তার ব্যাপারে যা করার ভারতীয় দূতাবাস করবে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একটি বাড়ি থেকে দাউদ মার্চেন্ট ও তার আশ্রয়দাতা জাহিদ শেখকে ২০০৯ মালের ২৯ মে গ্রেফতার করা হয়। জাহিদ শেখ মাফিয়া ডন ছোটা শাকিলের ঘনিষ্ঠ। দাউদ মার্চেন্ট ও জাহিদ শেখকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পরে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। মার্চেন্ট গ্রেফতারের পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, চোরাচালান, মানবপাচার, জালমুদ্রার ব্যবসাসহ বহু বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এমনকি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাকিস্তানের শীর্ষ জঙ্গি সংগঠনের প্রধানদের বাংলাদেশে হরহামেশা যাতায়াত এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ ছিল বলে প্রকাশ পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে পাকিস্তান ও ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য প্রকাশ করে। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর দাউদ মার্চেন্ট আদালত থেকে জামিন পায়। জামিনের কাগজপত্র ২৯ নভেম্বর কারাগারে পৌঁছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দাউদ মার্চেন্টকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পরই গোয়েন্দা পুলিশ আবার মার্চেন্টকে আটক করে। এতদিন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হিসেবে কারাগারে ছিল মার্চেন্ট। গত ৩ নভেম্বর ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেলসুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, মার্চেন্টের মুক্তির আদেশের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে গত ৬ নভেম্বর রবিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আব্দুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্টকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানিয়েছে, মার্চেন্টকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার আগেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। মুক্তির পর মার্চেন্টকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিশেষ ব্যবস্থায় গাড়িতে করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিয়ে যায়। সেখানেই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পুশব্যাক করা হয়। যদিও বাংলাদেশ ও ভারতের কোনো দায়িত্বশীল সূত্রই বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দাউদ মার্চেন্ট ও তার সহযোগী জাহিদ শেখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মোস্টওয়ান্টেড দুই ভারতীয়কে ফেরত পেতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তি পায় দাউদ মার্চেন্ট। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম