ট্রাম্প বা হিলারি যেই জিতুক বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সুবিধা মিলবে
বিশ্বজিৎ দত্ত: ট্রাম্প বা হিলারি যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন তবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গতিপথ কী হবে তাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থেকে তার একটা আভাস পাওয়া যেতে পারে। এর বাইরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এই দুই প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত মতামতের কারণে কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে।
যদি হিলারী জিতেন : তিনি পারিবারিক ভিসা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মার্কিন মুলুকে পরিবারের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ শ্লথ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিবারের কয়েক জন আমেরিকায় থাকলেও অন্য সদস্যরা দেশেই রয়ে গিয়েছেন। হিলারির প্রতিশ্রুতি এই প্রক্রিয়াটিকে তিনি দ্রুত করবেন। শুধু তাই নয়, ভিসার খরচও কমিয়ে দেওয়া এবং ‘ল্যাঙ্গোয়েজ প্রোগ্রাম’-এর সুবিধা আরও অনেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও হিলারি জানিয়েছেন। আটকে থাকা ভিসার আবেদনের প্রায় ৪০ শতাংশ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসে। এই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ফলে ভারতের লাভ হবে। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্তদের গ্রিনকার্ডের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এরমধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যারা স্নাতক হবেন বা পিএইচডি করবেন তারা আপনা আপনি স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি বা গ্রিন কার্ড পেয়ে যাবেন। এর ফলে বাংলাদেশি পড়–য়াদের সুবিধা হবে। অন্য দিকে অবশ্য ‘ব্রেন ড্রেন’-এর পথ আরও সুগম হবে। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের যুগে প্রচুর প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি সমস্যার সৃষ্টি করবে।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সংস্থা খুললে সহজে ভিসা পাওয়া যাবে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০০ কোটিরও বেশি মূল্যের ৮৭টি নতুন ব্যবসার মধ্যে ৪৪টি শুরু করেছেন অভিবাসীরা। তাই এই ধরনের নতুন ব্যবসা কেউ শুরু করতে চাইলে ভিসার নিয়ম শিথিল করার কথা বলেছেন হিলারি। সহজেই স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পাবেন তারা। তবে এ ক্ষেত্রে আমেরিকা থেকেই বিনিয়োগ জোগার করতে হবে। এর ফলে আমেরিকায় কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি নতুন ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহীদের সুবিধা হবে। তবে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংস্থা খুলতে চাইলেই এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
এইচ-১বি-ভিসা প্রক্রিয়ার সংস্কার অভিবাসন প্রক্রিয়ার আমূল সংস্কারে আগ্রহী হিলারি। যার মূল উদ্দেশ্য মার্কিন মুলুকে বেআইনিভাবে যারা বাস করছেন তাদের আইনি ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা। সে ক্ষেত্রে এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়ারও পরিবর্তন আসতে পারে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র এই এইচ-১বি ভিসার উপরে নির্ভরশীল। শুধু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীই নন, সাধারণ অভিবাসীদের আমেরিকায় কাজ করতে আসার জন্যও এইচ-১বি ভিসা ব্যবহার করতে চান হিলারি। এতে মার্কিন সংস্থাগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে কর্মী পাওয়ায় সমস্যা হতে পারে।
যদি ট্রাম্প জেতেন : ট্রাম্প এইচ-১বি-ভিসার পক্ষে। এই ভিসা নিয়ে যে সব কর্মী বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে কাজ করতে আসবেন তারাও যাতে মার্কিন কর্মীদের মতো মাইনে পান তা নিশ্চিত করতে চান ট্রাম্প। এই ধরনের ভিসা নিয়ে যে দুর্নীতি হয় তা বন্ধ করতে আগ্রহী ট্রাম্প। আমেরিকা-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাল্লাটি বিপুলভাবে চীনের দিকে ঝুঁকে আছে। আমেরিকার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি বরাবরই আলোচনার বিষয়। এই ঘাটতি দূর করতে চীনের পণ্যের উপরে কর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাক চীনের পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।
ট্রাম্প বরাবরই বিনিয়োগকারীদের উচ্চ করের বিরোধী। আমেরিকায় কর্পোরেট করের হার এখন প্রায় ৩৯ শতাংশ। ট্রাম্পের মতে এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যায়। তাই ট্রাম্প বিনিয়োগকারীদের করের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চান। আমেরিকায় বিনিয়োগে আগ্রহী বাংলাদেশিদের কাছে এর থেকে মধুর বচন আর কী হতে পারে!
রাজনীতির ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব: হিলারি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ভালভাবে জানেন। বাংলাদেশে ড. মোহম্মদ ইউনূস, কামাল হোসেন ছাড়াও তার কিছু ব্যক্তিগত পরিচিত লোক রয়েছেন। তারা হিলারিকে প্রভাবিত করতে পারেন রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করার। অন্যদিকে ট্রাম্প বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহাল হন। তার ব্যক্তিগত বন্ধুও নেই এখানে। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ধারাবাহিকতাতেই বাংলাদেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম