হিলারিকে ৯০ ভাগ এগিয়ে রাখলো রয়টার্স
প্রিয়াংকা আচার্য্য: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরুর মাত্র কয়েকঘণ্টা আগের এক নির্বাচনি জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ বলে দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের করা জাতীয় জরিপে এমনটিই প্রকাশিত হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, এ নির্বাচনে ট্রাম্প বাজিমাত করতে পারবেন কি না তা নির্ভর করছে ছয় অথবা সাতটি অঙ্গরাজ্যে শ্বেতকায়, কৃষ্ণকায় ও হিস্পানিক ভোট কী পরিমাণ পড়ছে তার উপর। নির্বাচন শুরু হওয়ার কয়েকঘণ্টা আগের জরিপ বলছে, পপুলার ভোটের ৪৫ শতাংশ হিলারি ও ৪২ শতাংশ ট্রাম্প পাবেন এবং ইলেক্টোরাল কলেজে হিলারি ৩০৩ ভোট ও ট্রাম্প ২৩৫ ভোট পাওয়ার পথে রয়েছেন। সূত্র: ইউএসএ টুডে, রয়টার্স, বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে ইলেক্টোরাল কলেজে ২৭০ ভোট পেতে হবে। ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা নির্ভর করছে ফ্লোরিডা, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও এবং পেনসিলভ্যানিয়ার ফলাফলের উপর।
জনমত জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে চার পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি ক্লিনটন। এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার। এটা মার্কিনিদের জন্য একটি রেকর্ড। নির্বাচনে হিস্প্যানিক ভোটারদের উপস্থিতি হবে অনেক বেশি এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। আর এসব ভোটারের বেশির ভাগই হিলারিপন্থি।
এদিকে সর্বশেষ সমাবেশে আত্মবিশ্বাসী হিলারি বলেন, নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি অবশ্যই ট্রাম্পকে টেলিফোন করবেন। পাশাপাশি দেশ গঠনে তিনি ট্রাম্পের গঠনমূলক ভূমিকা ও সাহায্য পাবেন বলেও আশা করেন। সর্বশেষ প্রচারণায় হিলারি বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলোতে ‘ক্রিস ক্রসিং’ করে ছুটে বেড়িয়েছেন। দুজনেই শেষ সময়ে র্যালি করেছেন ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে পরিচিত নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া এবং মিশিগানে। ফিলাডেলফিয়াতে হিলারির পক্ষে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তারা হিলারিকে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগামীতে যে নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে তিনি হলেন হিলারি ক্লিনটন। হিলারি ক্লিনটনের শেষ প্রচারণা শেষ হয় নর্থ ক্যারোলাইনার রেলিতে। সেখানে উপস্থিত থেকে দর্শক, ভোটার, সমর্থকদের মাতিয়ে তোলেন হালের ক্রেজ হিসেবে পরিচিত লেডি গাগা।
অন্যদিকে ট্রাম্প তার শেষ প্রচারণা চালান মিশিগানে গ্রান্ড র্যাপিডসে। ব্যবসায়ী ট্রাম্প এ সময়ও হিলারি ক্লিনটনের সমালোচনা করে বলেন, প্রেসিডেন্ট পদে এ যাবত যত মানুষ প্রার্থী হয়েছেন তার মধ্যে হিলারি ক্লিনটন হলেন সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ। তিনি এফবিআইয়ের ইমেইল কা- তুলে ধরেন। তবে গত রোববার এফবিআই হিলারিকে নির্দোষ বলে ঘোষণা দেওয়ায় তার এ অভিযোগ ধোপে আর টিকছে না। ফলে প্রথম নারী প্রেসিডেন্টকে বরণ করতে রীতিমতো প্রস্তুত।
এছাড়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক বোদ্ধাই অভিমত দিয়েছেন হিলারিই সেরা প্রার্থী। ব্রিটেনের প্রভাবশালী ইকোনমিস্টের এক লেখার শিরোনাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভরসা হিলারি। ওদিকে, গার্ডিয়ান লিখেছে গোটা বিশ্বের জন্যই ভরসা হিলারি ক্লিনটন। কেননা, মার্কিন নির্বাচন মার্কিন মুল্লুক ছাপিয়ে পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য নন- এমন অভিমত দিয়েছেন অনেকে। হিলারি ক্লিনটন শুধু যে এ কারণেই সেরা পছন্দ তা কিন্তু নয়। সফলতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালনের প্রুভেন ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সফল ছিলেন হিলারি। বিশ্বব্যাপী নারী স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে হিলারির সামনে নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে সন্দেহ নেই। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফল দুই মেয়াদের পর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রথমদিন থেকেই হিলারির পররাষ্ট্রনীতির দিকে চোখ থাকবে সারা বিশ্বের।
প্রতিকূলতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার টেম্পারমেন্ট যদি এবারের কোনো প্রার্থীর থেকে থাকে তাহলে তিনি হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের সফল নারী রাজনীতিকদের মধ্যে সব থেকে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার তারই। অর্জনের পাল্লাও তারটাই ভারী। দেশটির ইতিহাসে প্রথম ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট সম্বোধনটা তার জন্যই মানানসই।
এদিকে সর্বশেষ প্রচারণায় হিলারি ক্লিনটন ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। টুইটারে এক বার্তায় এ বিষয়ে হিলারি বলেছেন, আজ আপনি পার্থক্য গড়ে তুলতে পারেন। এ জন্য কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন। আমরা সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে চাই, কোনো দেয়াল নয়। এ জন্য বেরিয়ে পড়ুন এবং ভালবাসা ছড়িয়ে দিন, ঘৃণা ট্রাম্পের জন্য। সম্পাদনা: আনোয়ার