মানুষের প্রতি ভালবাসতে শেখায় ইসলাম
হুমায়ুন আইয়ুব: মানুষের প্রতি ভালবাসা না থাকলে আল্লাহকেও ভালবাসা যায় না। মানবপ্রেমই আল্লাহ প্রেম। কেউ অসহায় কোনো মানুষ, শিশু বা জীবজন্তুকেও নিঃস্বার্থভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহ তখন তার প্রতি দরদি হয়ে ওঠেন।
আল্লাহ মানুষের স্বভাব-চরিত্রে যে প্রেমবোধ দিয়েছেন, তা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা সর্বব্যাপী। তাই মানুষ আপনজনের গ-ি ছাড়িয়ে তার ভালবাসা সবাইকে উজাড় করে দেয়।
দয়া-মায়া, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও হৃদয়ের টান একজন মানুষের পক্ষ থেকে অন্য মানুষ অবশ্যই পেতে পারে। ভালবাসার পাত্র হতে পারেন সন্তান-সন্ততির জন্য তাদের মা-বাবা, মা-বাবার জন্য তাদের ছেলেমেয়ে, ভাইয়ের জন্য বোন, বোনের জন্য ভাই এবং অপরাপর আত্মীয়-অনাত্মীয় যেকোনো আপনজন। একজন মানবের ভালবাসা একজন মানবীও পেতে পারেন। তবে সে ভালবাসা হতে হবে বৈধ ও অনুমোদিত। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসা, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা কেবল শরিয়তের অনুমোদনের গ-িতেই আবদ্ধ নয়; বরং তা বহুবিধ পুণ্যময় কাজ। ভালবাসা পোষণ ও প্রকাশের বৈধ কোনো সম্পর্ক ছাড়া ইসলামে একজন মানব-মানবীর মধ্যে হৃদয়ের কোনো টান থাকা এবং প্রেমকে আরও গভীর করার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তির জন্য আল্লাহ ও রাসুলকে ভালবাসতে হবে এবং সৎ পথে চলতে হবে। কথায়, কাজে, চিন্তায়, বিশ্বনবী (সা.)-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ সম্ভবপর হলেই সফলকাম হওয়া যাবে। যে বা যারা মা-বাবা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, গরিব-দুঃখীজন ও অন্য সবাইকে মানবতার দৃষ্টিতে যথারীতি ভালবাসে; সে মূলত আল্লাহর হুকুমেরই তাবেদারি করে এবং সব মানুষের প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথ পালন করা বস্তুত আল্লাহ প্রেমের সামিল।
শুধু মানুষ নয়, জীবে দয়া করতেও উৎসাহিত করে ইসলাম। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন কিছু মহৎ গুণ দিয়ে। এসব মহৎ গুণাবলির মাধ্যমেই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। এমনই একটি গুণ হলো অপরের প্রতি দয়া বা অনুগ্রহ করা। মানুষ কেবল মানুষের প্রতি দয়া করবে এমনটি নয়, বরং পশুপাখির প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতে হবে। ইসলাম ধর্মে এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জীবে দয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। একদিন বিকালে মহানবী (সা.) এক বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন বনের ধারে একটি তাঁবু। তাঁবুর সামনে গাছের সঙ্গে একটি হরিণী বাঁধা। তিনি লক্ষ্য করলেন হরিণীটির চোখ দুটো ছলছল করছে। দুধের ভারে বাট দুটি পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তিনি বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই হরিণীটির দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা রয়েছে। হরিণীটি হয়তো সকালে ধরা পড়েছে। তাই বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেনি। তিনি শিকারিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা হরিণীটিকে ছেড়ে দাও। কারণ মায়ের দুধ না পেয়ে কয়েকটি কচি বাচ্চা হয়তো প্রাণ হারাবে।’
শিকারিরা ছিল ইহুদি। বনের পশুদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর দরদ দেখে তারা হরিণীটিকে ছেড়ে দিল এবং রাসুল (সা.)-এর হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীদের উচিত মানুষে মানুষে বন্ধন তৈরি করা। জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম