ভিক্টোরিয়া থেকে দেড়শ বছরের ইতিহাস পাল্টে ‘গ্লাস সিলিং’ হিলারির
লিহান লিমা: মার্কিন নির্বাচনের এই ক্ষণ একজন নারীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করার। শুধুমাত্র হিলারিকেই নয়, গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনকেও প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোট দিয়ে ইতিহাস রচনা করবেন প্রতিটি মার্কিন নাগরিক। এই ইতিহাস, এই গণতন্ত্রের সুবর্ণ মুহূর্তের পথ অনেক পুরনো। জাদুকরী, কুহকিনীর তকমা নিজের গায়ে মেখে এক শতাব্দি আগের অসম্ভবের গল্পকে সম্ভব করে মার্কিন নারীদের পথ সুগম করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ভিক্টোরিয়া উডহল।
১৮৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ‘ইকুয়্যাল রাইটস পার্টি’ থেকে ভিক্টোরিয়া উডহল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। নারীদের ভোটাধিকার, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং বৈধ পতিতাবৃত্তির পক্ষে আন্দোলনের জন্য ভিক্টোরিয়া এ মনোনায়ন পান। ১৮৭২ সালের ২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ১৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে দুই ডেপুটি মার্শাল কোলফাক্স ও বার্নার্ড ব্রডস্ট্রিটে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে থেকে ভিক্টোরিয়াকে গ্রেফতার করেন। তার বিরুদ্ধে অশালীন প্রকাশনা প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়। তবে তিনি সফল হননি মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, নিয়মানুযায়ী তার বয়স তখনও ৩৫ হয়নি, দ্বিতীয়ত, সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার ছিল না।
ভিক্টোরিয়া উডহল জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৩৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও অঙ্গরাজ্যে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না তার। সারাজীবন লড়াই করেছেন নারী অধিকার, নারী ভোটাধিকার, নারীবাদ, নাগরিক অধিকার, দাসপ্রথা রোধ ও অবাধ প্রেমের আন্দোলনে। তার মধ্যে ছিল ১৯ শতকের মার্গারেট থ্যাচার, ম্যাডোনা এবং হলিউড ম্যাডাম হেইদি ফ্লেইসের প্রতিফলন। প্রথম নারী হিসেবে তিনিই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের শেয়ার চালু করেন এবং পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের ভোটাধিকার পাওয়ার পিছনে ৪৮ বছর ধরে সংগ্রাম করেছিলেন ভিক্টোরিয়া। নিউইয়র্কের ২০ হাজার নির্যাতিত যৌনকর্মীর পক্ষে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেন। ১৮৭১ সালে তিনি এক র্যালিতে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি একজন মুক্ত প্রেমিকা। শিকাগো ট্রিবিউন তাকে ‘অশ্লীল এবং কামলালসাপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। অন্যরা তাকে বলত ‘ভয়ঙ্কর কুহকিনী’। নারী ভোটাধিকার, প্রেমের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা এবং মুক্তগণমাধ্যমের পক্ষে ভিক্টোরিয়ার জোরালো কণ্ঠস্বর অনেক সমালোচককে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে।
শেয়ার ব্যবসায়ী, লেখক, সাংবাদিক ও প্রথম গ্লাসসিলিং করতে যাওয়া নারী রাজনীতিবিদ ভিক্টোরিয়ার স্থানে এখন গ্লাসসিলিং করেছেন ৩০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবি, ফার্স্টলেডি, সিনেটর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ডায়ান রডহাম ক্লিনটন। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর। ২০০৯-১৩ পর্যন্ত ৬৭তম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১-০৯ পর্যন্ত নিউইয়র্কের প্রথম নারী সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বামী বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ১৯৯৩-০১ পর্যন্ত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি। বিল গভর্নর থাকাকালে ১৯৭৯-৮১ এবং ১৯৮৩-৯২ পর্যন্ত ছিলেন আরাকানসাসের ফার্স্ট লেডি। ১৯৭৮ সালে লিগ্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন-এর প্রথম নারী চেয়্যারমান এবং পরের বছর রোজ লর্ফামের প্রথম নারী অংশীদার হিসেবে নিয়োজিত হন হিলারি।
১৯৯৫ সালে ইউএন কনফারেন্স অন উইম্যান এ হিলারি বলেছেন ‘নারী অধিকারই মানবাধিকার এবং মানবাধিকারই নারী অধিকার’। আর এই মুহূর্ত মার্কিন নারীদের হৃদয়ের, জয়ের, আনন্দের ও ইতিহাস গড়ার। ১৫০ বছরের ইতিহাস পাল্টে হিলারির পাশাপাশি গ্লাসসিলিং করছেন প্রতিটি মার্কিন নারী। সূত্র: উইকিপিডিয়া। সম্পাদনা: আনোয়ার