সুস্থ হয়েও বন্দিজীবনে চট্টগ্রামের বীথি
কলিট তালুকদার, পাবনা : ‘বিয়ের বছর খানেক পার হতে না হতেই স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরই মাঝে না ফেরার দেশে চলে যান মা। কিছুদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাবা। তারপর থেকেই বড় ভাই আর আমার ওপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। কৌশলে চক্রান্ত করে ভাইকে পাঠানো হয় জেলে। এসব কারণে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় চিকিৎসার জন্য আমাকে পাবনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান বাবা। আমি সুস্থ হয়ে ওঠার দেড় বছর পরও বাবা আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিচ্ছেন না। এমনকি বিন্দুমাত্র খোঁজও নেন না তিনি। সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতেই বাবা আমাকে ফেলে রেখেছেন। আমি চার দেওয়ালের মাঝে থাকতে চাই না, আমি বাড়ি ফিরতে চাই’-এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও হতাশার কথা বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন নাহিদা আক্তার বীথি (৩১)।
বীথি চট্টগ্রামের পাহারতলী থানার হরিদাসপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলহাজ বেলায়েত হোসেনের মেয়ে। সুস্থ হয়েও হাসপাতালের চার দেয়ালে এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন নাহিদা আক্তার বীথি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে মানষিক অসুস্থতার কারণে পাবনার সুরমা বেসরকারি মানষিক হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান বাবা বেলায়েত হোসেন। ভর্তির ৬ মাসের মাথায় সুস্থ হয়ে ওঠেন বীথি। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর কেটে গেছে দেড় বছর। বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া তো দুরের কথা, কখনো একবারের জন্যও নিজের মেয়ের খোঁজ নেননি ব্যবসায়ী বাবা বেলায়েত। ফলে হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝে দুর্বিষহ দিন কাটছে বীথির। আর তাকে নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বীথিকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা।
সুরমা মেন্টাল ক্লিনিকের পরিচালক সায়েন শেখ জানান, ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বরে চট্টগ্রামের শহরতলী থানার হরিদাসপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলহাজ বেলায়েত হোসেন তার মেয়ে নাহিদা আক্তার বীথিকে মানষিক অসুস্থতার কারণে পাবনার হেমায়েতপুর বুদেরহাট এলাকার সুরমা মেন্টাল ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে যান। পাবনা মানসিক হাসপাতালের তৎকালীন চিকিৎসক ডা. জোবায়ের মিয়া তাকে চিকিৎসা দেন। এর ৬ মাসের মাথায় সুস্থ হয়ে ওঠেন বীথি। এরপর বীথির সুস্থতার বিষয়টি তার বাবাকে জানিয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে নিতে বারবার যোগাযোগ করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সম্পাদনা : তারেক