রসরাজের একাউন্টের ছবি আরও দুইদিন আগে পোস্ট করা হয় ওয়াসিম বিডিতে
রিকু আমির (নাসিরনগর)ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : নাসিরনগরের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাসের ফেসবুকে কাবা শরিফ বিকৃতির যে ছবি নিয়ে এতো তোলপাড়, একই ছবি পাওয়া গেছে ওয়াসিম বিডি (ইংরেজিতে লিখা) নামক একটি ফেসবুক একাউন্টে। ছবিটি ওয়াসিম বিডিতে পোস্ট করা হয়েছে রসরাজের একাউন্টে পোস্টের দুইদিন আগে ২৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে।
এ বিষয় গোয়েন্দাদের ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্তে জানতে পেরেছে- গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে রসরাজ জ্ঞানহীন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, ফেসবুক চালানোর দক্ষতা নেই, স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে পূর্ব থেকে থাকা কোন্দল- তাই ওয়াসিম বিডির পোস্টটি তদন্তের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে গ্রহণ করেছে গোয়েন্দারা।
সূত্র বলছে- ওই একাউন্টে পোস্ট করা হলো আগে, রসরাজের একাউন্টে দুইদিন পরে, অথচ ওই একাউন্টের পোস্ট নিয়ে কিছু হল না। রসরাজকে নিয়েই কেন হলো- এটি খুবই ভাববার বিষয়।
নাসিরনগরে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের সময় ডটকমকে জানান, শুধু ২৬ অক্টোবরেই নয়, ওয়াসিম বিডিতে ওই ছবি সেদিন থেকে ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত ২২বার পোস্ট করা হয়েছে। ২৬ অক্টোবর একবার, ২৭ অক্টোবর ৭ বার ও ২৯ অক্টোবর ১৪ বার। আলোচিত ছবিটি ছাড়াও ইসলাম কেন্দ্রিক আরও কিছু ছবিও (উস্কানিমূলক ভাষাসহ) আছে একাউন্টটিতে। একাউন্ট দেখে মনে হয়- সেটা কোনো হিন্দু ব্যক্তি পরিচালনা করেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কারা বিকৃত ছবি প্রিন্ট করে বিতরণ করেছে, ফটোকপি করেছে, লাখ লাখ টাকা বিতরণ, বহিরাগতদের ট্রাকে, মোটরসাইকেলে করে নাসিরনগর সদরে এনেছে- তা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেইসব ব্যক্তি আছেন- কড়া নজরদারিতে। যে কোনো মুহুর্তে গ্রেফতারও করা হতে পারে। এখানে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই আছে।
ফেসবুকে এই একাউন্টের সন্ধান পাওয়া যায় এবং গোয়েন্দাদের তথ্যের সঙ্গে চোখের দেখার মিল রয়েছে। গোয়েন্দাদের গভীর সন্দেহ- ওয়াসিম বিডিতে পোস্ট করা কাবা শরিফের ছবি রসরাজের ছবির সঙ্গে মিলে যাওয়া ও ছবি কেন্দ্র করে নাসিরনগরে হামলায় যোগসূত্র আছে।
অন্যদিকে, প্রায় এক সপ্তাহ হয়েছে- ইন্টারনেট সুবিধা সম্পন্ন রসরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম কার্ড ও তার ফেসবুক আইডি ফরেনসিকের জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। দুই-তিনদিনের মধ্যেই এটা হাতে আসবে গোয়েন্দাদের। তখনই ছবির মূল উৎসকে বা রসরাজ কি-না, তা পরিষ্কারভাবে জানতে পারবে গোয়েন্দারা।
যেহেতু এলাকাবাসী বলছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জানতে পেরেছে- হামলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এলাকার বাইরের লোক অংশ নেয়, সেহেতু নাসিরনগরের আশপাশের সব থানা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছাকাছি সব জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। সেসব জায়গায় ভিডিও ফুটেজসহ হামলায় অংশগ্রহণকারীদের মুখ চিনতে যতো রকমের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তত রকম জিনিস পাঠানো হয়েছে বলে নাসিরনগর থানা পুলিশের সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়।
সূত্রটি জানায়, গত রোববার নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকা থেকে স্থানীয় পুলিশ ১১জন তরুণকে আটক করেছে। ভিডিও ফুটেজে থাকা চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে এসব তরুণের।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার গভীর রাতে এ প্রতিবেদককে মুচকি হেসে বলেন, খুব দ্রুতই দেখতে পারবেন, খলনায়ককে।